জুন ২১, ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম
কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জে পাঁচ দিনের ব্যবধানে পুলিশ হেফাজতে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংগঠনটি এ দুই ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনটির সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আসক ঘটনাগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে।
এতে বলা হয়, ১৯ জুন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে শেখ জুয়েল (৩৫) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আটক অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে, পুলিশি নির্যাতনের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ১৩ জুন রাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় পুলিশের অভিযানে ফিরোজা বেগম (৫০) নামে এক নারীকে আটক করা হয়।
স্থানীয় সূত্র ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল না। তবুও তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন সকালে থানা হেফাজতেই তার মৃত্যু ঘটে।
যদিও পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করে, তবে এখন পর্যন্ত থানার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি। আসকের মতে, সঠিক ঘটনা জানার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি।
আসক জানায়, উভয় ঘটনার ক্ষেত্রেই নিহতদের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পুলিশ শুরু থেকেই এ মৃত্যুগুলোকে ‘স্বাভাবিক’ বলে প্রচার করছে, যা কোনো তদন্ত ছাড়াই একপাক্ষিক ব্যাখ্যা দেওয়ার সামিল এবং ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা হতে পারে।
আসক আরও বলেছে, হেফাজতে মৃত্যু ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ এবং এই ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।
সংগঠনটি দাবি করেছে, উভয় ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে, ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনগত সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে হবে এবং দায়ীদের যথাযথভাবে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে আসক আরও উল্লেখ করে, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর এমন পুনরাবৃত্তি শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনআস্থা কমাচ্ছে না, বরং দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ সংস্কৃতি তৈরি করছে।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের জীবন, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আসকের আহ্বান, তারা যেন পেশাদারিত্ব, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে।