ইনস্টাগ্রামে বিদেশি বন্ধু; পার্সেল পাঠিয়ে কাস্টমস চার্জের নামে হাতিয়ে নেয় টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৬, ২০২৩, ০১:০৯ এএম

ইনস্টাগ্রামে বিদেশি বন্ধু; পার্সেল পাঠিয়ে কাস্টমস চার্জের নামে হাতিয়ে নেয় টাকা

মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাধীন এলাকায় বসবাসরত একজন নারীর (২৬) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ইনস্টাগ্রাম) বিদেশি এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে বিদেশি ব্যক্তি ১৭ মে ভিকটিমের ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠিয়েছে বলে জানায় এবং তা এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করার জন্য বলে। 

পরেরদিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাস্টমসের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক মহিলা তাঁকে জানায় তাঁর নামে একটি অতি মূল্যবান পার্সেল বিমানবন্দরে এসেছে। পার্সেলটি ডেলিভারি করতে কাস্টমস্ চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। অজ্ঞাতনামা মহিলার কথা অনুযায়ী ভিকটিম ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করে।

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি পুনরায় ভিকটিমকে জানায় সিকিউরিটির জন্য আরও ৩০ হাজার টাকার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ভিকটিম উক্ত মহিলার কথা অনুযায়ী উক্ত একাউন্টে আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠায়। পার্সেলের জন্য ওই নাম্বারে যোগাযোগ করলে জানানো হয় পার্সেল তাঁর বাসায় পৌঁছে যাবে। 

পরবর্তীতে ভিকটিম পার্সেল জন্য যোগাযোগ করলে উল্টাপাল্টা কথা বলে আরও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠানোর জন্য বললে ভিকটিম তাঁর আত্মীয়দের সাথে বিষয়টি আলোচনা করে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করে।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং কদমতলী থানাধীন শামীমবাগ থেকে ২ বিদেশি নাগরিকসহ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দুই নাইজেরিয়ান নাগরিক- চার্লস ইফিনেড উডিজু, ফ্রাঙ্ক কোকো অর্বিক্স। শফি মোল্লা (৩৬) ও মৌসুমি খাতুন (২৭)।

এ সময় তাদের নিকট থেকে ১টি মোটরসাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল ফোনসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া শাখায় সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাব-১০ অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, উচ্চবিত্তসহ সহজ-সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ভিকটিমদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। অতঃপর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায়। ভিকটিমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভিকটিমকে ফোন করে। পরবতীতে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহণ করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়। 

গ্রেফতারকৃত আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এ অভিনব প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়ে। 

গ্রেফতারকৃত নাইজেরিয়ান নাগরিক চার্লসের নামে পূর্বে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মৌসুমি ও শফি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশি সদস্য। মূলত তাদের মাধ্যমেই এই প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকরা ভিকটিম সংগ্রহ, বন্ধুত্ব স্থাপন, কাস্টমস্ অফিসার পরিচয় এবং শেষে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল বলে জানা যায়।

উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Link copied!