৪০ বছর ধরে পতাকা বিক্রি মামা-ভাগিনার

মাহাবুব আলম শ্রাবণ

ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ১২:০১ এএম

৪০ বছর ধরে এভাবেই পতাকা বিক্রি করে যাচ্ছেন মামা-ভাগ্নে। ছবি: দ্য রিপোর্ট লাইভ

দরজায় কড়া নাড়ছে মহান বিজয় দিবস। আর মাত্র কয়েকদিন লাল সবুজের পতাকায় সাজবে শহর বন্দর অলগলি সহ সারাদেশ।

বিজয়ের চেতনায় ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকে জাতীয় পতাকা বিক্রির উৎসব শুরু হয়ে চলে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত। বিজয়ের মাসে বাড়ির ছাদ, ঘরের বারান্দায়, এমনকি বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়।

বাঙালির বিজয়ের দিনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মতো এবারো রঙ্গিন পতাকার পশরা বসেছে পুরান ঢাকার চকবাজারে।

দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত চকবাজারে পতাকা বিক্রি করেছেন মামা ভাগিনা লাল-সবুজের পতাকার সাথে রয়েছে রিচ ব্যান্ড, স্টিকার, কাঠি পতাকা, মাথায় পড়ার ব্যান্ড, ব্যাচ, ক্যাপ, কাগজের পতাকা সহ বিভিন্ন রকম পতাকা।

মামা ভাগনের দোকানের পতাকা বিক্রেতা মোবারক হোসেন (মামা) দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমরা দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত এই ব্যাবসা করছি আমাদের দোকানে সব আইটেম পাওয়া যায়, বুক ব্যাচ গাল পতাকা, মাথার ক্যাপ, চরখি, কাগজের পতাকা, রঙিন কাগজ সহ সব আইটেম পাইকারি ও খুচরা পাওয়া যায়।

গত বছর থেকে এবছর কাগজের দাম ও কাপরের দাম কিছুটা বেশী হওয়ার একটু বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শহীদুল ইসলাম (ভাগিনা) বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের যত গুলো আইটেম আছে সবগুলো ভালো চলে বেচা-বিক্রিও ভালো। তবে এবার কাগজের দাম বেশী হওয়ার বান্ডেলে কাগজের পতাকা গুলো দশ থেকে পনেরো টাকা বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনার জন্য বিগত তিন চার বছর যাবত ব্যাবসা কিছুটা মন্দা থাকলেও এবার অনেকটাই ভালো যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে, চকবাজারের আরেক ব্যবসায়ী লাট মিয়া দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে বলেন, মালের দাম কিছুটা বাড়তি আগের যেই মালটা বিক্রি করতাম ৭০-৮০ টাকা সেটা এখন ১০০ টাকা বিক্রি করতে হয়। কাগজের পতাকার দাম একটু বেশী, অনেক সময় ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করর চলে যায়।

বিজয় দিবসে পতাকা বিক্রি করতে কেমন লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ এক যুগের ও বেশী সময় যাবত এই পতাকা বিক্রি করছি আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে।

বাঙালির আত্মত্যাগ আর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বাংলাদেশ আর লাল সবুজের পতাকা।

বিজয় দিবসে বাবার সাথে পতাকা কিনতে আসে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক শিশু তার বাবা জানায়, ছেলে বায়না ধরেছে পতাকা কিনে দিতে হবে, আমারো ভালো লাগে বিজয়ের দিনে আমার সন্তানের হাতে পতাকা থাকবে ওরাও জানুক আমাদের দেশ মুক্তিযুদ্ধ বিজয় সম্পর্কে তাই নিয়ে এসেছি।

দোকানে বিক্রির জন্য দনিয়া থেকে আসেন এক ক্রেতা তার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর এই পতাকা বিক্রি করেন তিনি এবং চকবাজারে কিনতে আসেন এই পতাকা তিনি বলেন যতগুলো আইটেম আছে সবগুলোই কিনেছি তবে গেলো বছরের চাইতে এ বছ দাম একটু বেশী।

এদিন কামরাঙ্গিচর থেকে বন্ধুদের সাথে পতাকা কিনতে এসেছেন সিফাত তিনি বলেন, প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে আমরা আমাদের বাড়ির ছাদ ও গলি সাজাই কিন্তু আগে যেই দামে পতাকা কিনেছি আমাদের সেই বাজেটে এখন আর হচ্ছে না প্রতি বান্ডেলে ১৫-২০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে তাও দশ হাজার পতাকা কিনেছি এর সাথে রশি, রঙ্গিন কাগজ আরোও অনেক কিছু নিতে হয়।

দাম বাড়লেও ক্রেতাদের চোখে পড়েনি এই পতাকার মার্কেটে ঘুরে ঘুরে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনছেন ক্রেতারা তাদের চোখেমুখে ছিলো আনন্দের ফোয়ারা।

লাল সবুজের পতাকার সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালির আত্মকথা। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে বাঙ্গালী পায় লাল-সবুজের পতাকা।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫২ বছরকে সামনে রেখে চকবাজারে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন এমন আরও অনেকে।

Link copied!