পরিচয়হীন হাত-পা ভাঙা বনানীর ছয় ক্রিকেটার!

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩, ০১:৪৬ এএম

পরিচয়হীন হাত-পা ভাঙা বনানীর ছয় ক্রিকেটার!

‘অদম্য বিজয়’ ভাস্কর্যটির ছয়জন ক্রিকেটারের অবস্থা যেন জন্ম-পরিচয়হীন রাস্তায় ফেলে রাখা বাচ্চার মতো। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বনানীর কাকলি মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন ছয় ক্রিকেটার। কারও হাত ভাঙা, কারও পা , কারও কোমড় ভেঙে বেঁকে পড়ছেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙ অনুযায়ী মোড়ানো এই ভাস্কর্যটি এখন সবুজ রঙের বদলে দাড়িয়ে আছে ধুলো-মাখা স্তুপ, লাল রং ফিকে হয়ে কমলাতে পরিণত হয়েছে। তবে বিজয়-উল্লাস মুখশ্রীতে দাঁড়িয়ে থাকা এই ছয় ক্রিকেটারের নাম জানেন না কেউ। কে বা কারা এই ছয় ক্রিকেটারকে দাঁড় করিয়েছিলেন এ বিষয়ে জানেন না স্থানীয়রা। আশে-পাশে থাকা লোকজনও বলতে পারেনি ভাস্কর্যটির নাম। শুধু স্থানীয়রাই নন এই ভাস্কর্যের বিস্তারিত বলতে পারছেন না দায়িত্বরত কোনো প্রতিষ্ঠানও।

স্থানীয়রা জানে না কেন এই ভাস্কর্য

২০১১ সালে যখন বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলংকা যৌথভাবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১০ম আসরের আয়োজক হয়েছিল। তখন ঘটা করে বনানীর কাকলী মোড়ের সড়ক দ্বীপে ছয়জন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের প্রতিকৃতি অদম্য বিজয় নামে ভাস্কর্যের গোড়া পত্তন ঘটেছিল। বাংলার ক্রিকেটারদের সাহস ও সম্মান জানাতেই এই ভাস্কর্যটি এখানে স্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে একে একে কেটেছে এক যুগ। শুরুতে সংস্কার, পরিচর্চা, যত্ন নিলেও এখন কেউ খবরও রাখেন না। খোঁজও নেন না বছরে একবার, কেমন আছেন ক্রিকেটাররা?

কাকলির মোড়ে বিশ বছর ধরে থাকা চা বিক্রেতা মইন উদ্দিন বলেন, এইটা যে ভাস্কর্য সেটাই জানি না,কে করেছে কিভাবে জানব। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশও বলতে পারেননি ভাস্কর্য সম্পর্কে। প্রায় বারো বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ‘অদম্য বিজয়’ নামে এই ভাস্কর্যটির ছয়জন ক্রিকেটারের অবস্থা যেন জন্ম-পরিচয়হীন রাস্তায় ফেলে রাখা বাচ্চার মতন।

শিল্পকর্মহীন ভাস্কর্য!

ভাস্কর্য সম্পর্কে বিশদ জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুকুল কুমার বড়াইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের শিল্পকর্ম কোনো ভাস্কর্যের মধ্যেই পড়ে না, ভাস্কর্যের যে কাঠামো অবলম্বন করতে হয় সেগুলোর কোনো কিছু করা হয়নি। এমনকি তাদের সাথে কখনো এইসব নিয়ে যোগাযোগ করেনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তাই এই বিষয়ে কথা বলাটাও এক ধরনের বিতর্ক আনতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। চুক্তিভিত্তিক এই কাজগুলো স্থাপত্য বিভাগের আওতায় হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন মুকুল কুমার।

দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ

তবে স্থাপত্য বিভাগের নির্বাহী স্থপতি আলী আশরাফ দেওয়ান বলেন, এ ধরনের কোনো চুক্তিগত স্থাপত্য বা কোনো কাজ তারা করেন না, এ ধরনের কাজ সাধারণত সিটি কর্পোরেশনের আওতায় হয়ে থাকে।

ভাস্কর্যটি কে বা কারা উদ্যোগ নিয়ে করেছিল এই বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড, মহাখালী এবং বনানীর সাধারণ কাউন্সিলর মো. নাছিরকে ফোন করা হলে জানা যায় তিনি এই বিষয়ে অবগত নন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর মফিজুর রহমান এটার দায়িত্বে আছেন।

মফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি প্রকৌশলী বিভাগে যোগাযোগ করতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রহমান খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও অবগত নন বলে জানান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন এ বিষয়ে অজ্ঞাত বলে জানান এবং আশ্চর্যজনক বিষয় হয়ে দাঁড়ায় মকবুল হোসাইন জানেনই না এ বিষয়ের আদ্যপান্ত।

তিনি বলেন, কাকলির মোড়ের ভাস্কর্যটি আদতেও তাদের সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে আছে কি না এ বিষয়ে তিনি খোঁজ করবেন। ভাস্কর্যটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যে হতে পারে। পুরোপুরি খোঁজ নিয়ে তিনি  জানাবেন বলে ফোন রেখে দেন ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসানকে একাধিকবার ফোন করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হালিমুর রহমান জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় নেই কাকলীর মোড়ের ছয় ভাস্কর্য।

সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় যদি না থাকে কাকলী মোড়ের এই ভাস্কর্য তবে কারা বানিয়েছিলেন এই ভাস্কর্য?

বারো বছর ধরে টিকে থাকা এই ভাস্কর্যটি এখন লতা-পাতায় ঘেরা এক জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও নেই ভাস্কর্যটির জন্মবিত্তান্ত। ভাস্কর্যের সংরক্ষণ কিংবা পরিচর্যা নিয়েও এড়িয়ে যাচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

Link copied!