আত্মগোপনে গিয়েও চাকরি খুঁজছিলেন নিউ মার্কেটের সংঘর্ষকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ৫, ২০২২, ০৭:৪০ পিএম

আত্মগোপনে গিয়েও চাকরি খুঁজছিলেন নিউ মার্কেটের সংঘর্ষকারীরা

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নাহিদ ও মোরসালিন নিহত হয়। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং সংঘর্ষের সূত্রপাতকারীরা আত্মগোপনে গিয়ে নতুন চাকরি খুঁজছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চাকরির কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত দেন অভিযুক্তরা বলে জানান র‍্যাব। এছাড়া নিজেদের পোশাক ও উপস্থাপনও পরিবর্তন করেন তারা। বৃহস্পতিবার সকালে এক ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বুধবার রাতে শরীয়তপুর ও কক্সবাজারে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল রাতে এই ঘটনায় ঢাকা কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

হত্যাকান্ডে ১ ও সংঘর্ষে জড়িত ২ জন গ্রেপ্তার

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, তিনজনের মধ্যে ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মাহমুদুল হাসান সিয়ামকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংঘর্ষের দিন ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে। আর ওয়েলকাম নামে নিউ মার্কেটের একটি খাবারের দোকানের কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব (২৩) এবং মেহেদী হাসান বাপ্পিকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংঘর্ষ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও উসকানির অভিযোগে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শরিয়তপুর থেকে। সেখানে এক আত্মীয়র বাসায় আত্মগোপন করে ছিলেন তিনি। “ভিডিওতে দেখা গেছে, সিয়াম রড দিয়ে নাহিদকে পেটাচ্ছিলেন। পরে আরেকজন এসে নাহিদকে কোপায়।”

আর সজীব ও বাপ্পিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, “তারা সেখানে আত্মগোপনে ছিলেন।  বিভিন্ন হোটেলে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়ে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিল।”

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল কথা কাটাকাটির জেরে রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। ওই ঘটনায় তখন দুই শিক্ষার্থী ও দুই ব্যবসায়ী আহত হন। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরদিন সকাল ১০টার পর থেকে শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে।

এই সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নাহিদ হাসান নামে একজন কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী ১৯ এপ্রিল রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া ২১ এপ্রিল ভোরে মারা যান মোরসালিন (২৬) নামে এক দোকান কর্মচারী। তিনিও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। 

সংঘর্ষের এ ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। মোট আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৭২৪। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি, যেগুলোর তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অন্য তিনটি মামলা তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানার পুলিশ। নাহিদকে হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। তাঁরা হলেন মো. আবদুল কাইয়ুম, পলাশ মিয়া, মাহমুদ ইরফান, মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. জুনাইদ বোগদাদী। ডিবি জানায়, এই পাঁচজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। সংঘর্ষের সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সামনের সারিতে ছিলেন। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের একাধিক সূত্র জানায়, এই পাঁচজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

Link copied!