আসছে ইইউ’র অগ্রগামী দল, কী বার্তা দিবে সরকারকে?

মিজানুর রহমান খান

জুলাই ৮, ২০২৩, ০৫:০৪ পিএম

আসছে ইইউ’র অগ্রগামী দল, কী বার্তা দিবে সরকারকে?

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে শনিবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ সফরে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল। প্রতিনিধি দলটি ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান করে সরকার, বিরোধী দল ও নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই দলটির ঢাকায় আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। এহিসেবে তারা আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবশেষ ২০০৮ সালে জাতীয়  নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতেও সংস্থাটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায়। পর্যবেক্ষণে আসার পরিবেশ তাদের  অনুকূলে কিনা এবং এক্ষেত্রে সরকার, নির্বাচন কমিশন তাদের কী কী বিষয় নিশ্চিত করতে পারে তার আলোচনার জন্যই অনুসন্ধানী অগ্রগামী দলটি ঢাকায় আসছে।”

একই সুরে কথা বলেছেন  ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।  শনিবার একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “প্রাক-নির্বাচনী পর্যেবক্ষক দলটি বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে পারবে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখবে। ইইউ’র প্রতিনিধি দলসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসতে পারবেন কিনা সেব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণ ও সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা অবশ্যই দরকার।”

কূটনৈতিক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রাক-নির্বাচনী পর্যেবক্ষক দলটির ঢাকা সফর  নিয়ে এরই মধ্যে রাজনীতির মাঠ ও কূটনৈতিক পাড়ায় বেশ দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত এরই মধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ইস্যু, তাদের অংশগ্রহণ ও নির্বাচনি ভাবনা নিয়ে বৈঠক করেছেন।

তাছাড়া, রাজধানীতে গত বুধবার নিজের বাসায় ১২টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশার ও প্রতিনিধিদের ইইউ’র দলটির সফর নিয়ে চার্লস হোয়াইটলি ব্রিফ করেছেন।

এর পরের দিন বৃহস্পতিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানান, প্রতিনিধি দলটি মূল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়াদি মূল্যায়ণ করবে।

ওই ব্রিফিংয়ে আরও  বলা হয়,  “এ মিশনের কাজ হবে মূল নিবার্চন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়াদি মূল্যায়ন করা। উক্ত অনুসন্ধানী মিশন বাংলাদেশে অবস্থানকালে সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে ইচ্ছুক বলে ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশন জানিয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে এ সফর অনুষ্ঠিত হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করণীয় নেই উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, অনুসন্ধানী মিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) প্রেরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক ইইউ-র বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

সফরকালে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন এবং মানবাধিকার বিষয়ক সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলেও ব্রিফিংয়ে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এক বিশাল পর্যবেক্ষক দল সবশেষ বাংলাদেশে এসেছিল।

Link copied!