আহত শ্রমিকদের অর্ধেকই ধীরে ধীরে বিকলাঙ্গ হচ্ছেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৪, ২০২২, ০৫:৩৯ এএম

আহত শ্রমিকদের অর্ধেকই ধীরে ধীরে বিকলাঙ্গ হচ্ছেন

রানা প্লাজায় এক গার্মেন্টেসে সুইং অপারেটরের কাজ করতেন শাহজাহান মিয়া। ভবন ধসে বেঁচে গেলেও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে উদ্ধার কাজে অংশ নেন তিনি। উদ্ধারের সময়ই একটি দেয়াল তাঁর ওপর পড়লে পঙ্গু হয়ে যান। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় দোকান দিলেও শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

একশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপ অনুসারেরানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের ৫৬.৫ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। বর্তমান জরিপে ৫৬.৫ শতাংশের মধ্যে যাঁরা তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন। এরা বলেছেন তাঁরা কোমর, মাথাহাত-পা এবং পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।

এ বছর অবনতি ঘটতে শুরু করে

পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পরিচালিত জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পর্যায়ক্রমে উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। জরিপে আরো উঠে আসে, ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০.৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে।  

গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২.৫ শতাংশ, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০.৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।

আহতদের অর্ধেক বেকার

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মধ্যে একশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেএদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, শারীরি অক্ষমতার কারণে তাঁরা কাজ করতে পারেন না এবং ১০ শতাংশ এখনও মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে যার কারণ হিসেবে শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘ সময় একই ধরণের কাজ করার অক্ষমতার বিষয়টি উঠে এসে জরিপে।    

পেশা বদল করেছেন অনেকে

জরিপ অনুসারে১৪.৫ শতাংশ তাদের আদি পেশা গার্মেন্টসে ফিরে গেছেন এবং আরও ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সাথে জড়িত আছেন। অনেকেই তাঁদের পেশা বদলে গৃহকর্মদিনমজুরি, কৃষিকাজবিক্রয় এবং গাড়ি চালানোর মতো পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন ৷

জরিপে দেখা গেছে যে বেশিরভাগের আয় করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ৬৩.৫ শতাংশ বলেছেন, যে মহামারি চলাকালীন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাঁদের কাছে ছিল না। ৫১.৫ শতাংশ বলেছেন তাঁরা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননিএবং ২২.৫ শতাংশ বলেছেন তাঁরা সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারেননি। ৪৬.৫ শতাংশকে মহামারি চলাকালীন তাঁদের পরিবারের খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ করতে হয়েছে।

জরিপে প্রাপ্ত তথ্য মতে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় ৫ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পারিবারিক আয় রয়েছে। ৩৫ শতাংশ বলেছেন যে তাদের মাসিক খরচ ১০ হাজার টাকার বেশি এবং ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকারও বেশি যার অধিকাংশই খরচ হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় ,বাসা ভাড়াসন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে।

ক্ষতিপূরণ মেটানো হয়নি অনেকের

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা হয়নি। যখনই ২৪ এপ্রিল আসে বিচার নিয়ে কথা ওঠে। কিন্তু বছরের বাকি ১১ মাস এ নিয়ে কোনও কথা হয় না। শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে কারখানাগুলো নিরাপদ করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। এরপর অ্যাকোর্ড, অ্যালায়েন্স এসেছে। কিন্তু কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। এখনও বিভিন্ন কারখানায় ঘটছে দুর্ঘটনা। শ্রমিকরা জীবন দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখনও রানা প্লাজার যেসব শ্রমিক জীবিত আছেন তাঁরা এই দিনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসতে চাইলে কারখানার মালিকরা ছুটি দেন না। সরকার ও কারখানার মালিকরা এই দিন ভুলিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা এ ঘটনার বিচার চাই এবং চাইবো।

রানা প্লাজার আহত শ্রমিক নিলুফা আক্তার বলেন, আমি ক্ষতিপূরণ চাই। আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। পাশাপাশি রানার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন।

 

Link copied!