১৫ আগস্টের খুনিদের সংসদে বসিয়েছেন খালেদা জিয়া: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ০৩:৫০ এএম

১৫ আগস্টের খুনিদের সংসদে বসিয়েছেন খালেদা জিয়া: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন,‘১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যেমন ইনডেমনিটি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল তেমনি খালেদা জিয়া আরো একধাপ উপরে গিয়ে জনগণের সংসদে এনে একজন খুনিকে বসায়। ৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে সংসদ সদস্য করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসে খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকেও (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি) সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসা হয়।’

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, কুমিল্লা-৭ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে গৃহীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে যে নির্বাচনটা করেছিল, সকল রাজনৈতিক দল সেটা বয়কট করেছিল। সেটা ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্বাচনটা করা হয়। সেই নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে সংসদ সদস্য করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসে খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসায়। চান্দিনা থেকে কর্নেল রশিদকে এং চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকে (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি) সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসা হয়। পরে চান্দিনার সেই আসনে অবশ্য আলী আশরাফই জনগণের ভোটে জয়যুক্ত হন। কাজেই তিনি সবসময়ই একটা আদর্শ নিয়ে চলতেন এবং তিনি কেবল রাজনীতিবিদ নন একাধারে বিশিষ্ট লেখকও ছিলেন, ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে ১৫টি বই লিখেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সবথেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো তিনি যে এলাকা থেকে নির্বাচন করতেন কুমিল্লার চান্দিনা এলাকা, সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদের বাড়ি। তার পাশেই খন্দকার মোশতাকের (বাড়ি)।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ একজন অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ এবং গবেষক ছিলেন। এরকম বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন সংসদ সদস্যকে আমরা হারালাম। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। কেননা তিনি একজন প্রবীণ সংসদ হিসেবে নবীন সংসদ সদস্যদের নানারকম বুদ্ধি পরামর্শ দিতেন। আরো দুঃখজনক এই সংসদের আমরা অনেক সদস্যকেই হারিয়েছি।

সংসদ নেতা বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ পাঁচ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। সপ্তম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিভিন্ন কমিটিতে কখনো চেয়ারম্যান কখনো সদস্য হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ’৮০ সালে লন্ডনে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হওয়ার কথা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ সবসময় জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের যেমন প্রতিবাদ করেছেন তেমনি ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডে খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীও দিয়েছিলেন।

আলী আশরাফ অসুস্থ থাকাকালীন তার নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা ছিল হয়তো ফিরে আসবেন কিন্তু দুর্ভাগ্য অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। তিনি না ফেরার দেশেই চলে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আলী আশরাফের আত্মার মাগফিরাত কামসা করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান।

এ ছাড়া সংসদে সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জল হোসেন সরকার, জামাল উদ্দিন আহম্মদ, খুররম খান চৌধুরী, মো. রেজা খান জাহানারা বেগম, আনোয়ার হোসেন এবং গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

চলমান সংসদের কোনো আইনপ্রণেতা মারা গেলে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতবির রেওয়াজ থাকায় এর পরই স্পিকার সংসদের এদিনের অধিবেশন মূলতবি করে দেন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপিত হয়।

Link copied!