এলো খুশির ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ১৪, ২০২১, ০৭:০৮ এএম

এলো খুশির ঈদ

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।/ তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। —কাজী নজরুল ইসলাম।

পবিত্র রমজানের একমাস কঠোর সিয়াম সাধনার পর এল মুসলিম সম্প্রদায়ের বহুল প্রতিক্ষিত ঈদ। ঈদ মোবারক। 

সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে আজ। বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ঈদুল ফিতর আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে উৎসব, আনন্দ, খুশি। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের অবসানে নতুন চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব, প্রতিটি মুসলমানের হৃদয় আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। চার দিকে ধ্বনিত হয় ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য এক সাথে নামাজ আদায় করতে ছেলে-বৃদ্ধ সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অপরের সাথে। দোয়া ও মোনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সংযম সাধনার পর ঈদের দিনে রোজাদারেরা শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যান।

আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা প্রাক-ইসলামি যুগেও আরবে ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দু’টি বার্ষিক উৎসব ছিল অধিক জনপ্রিয়। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান, এ দু’টি জাতীয় উৎসবে মদিনার আবালবৃদ্ধবনিতা নানা প্রকার আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। তখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: তাদের তাৎপর্যহীন আনন্দ উৎসবের পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শমণ্ডিত এবং বহুবিধ কল্যাণধর্মী ঈদুল ফিতরের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, লিকুল্লি কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনা- অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির বার্ষিক আনন্দ-ফুর্তির দিন আছে। ঈদের দিন হচ্ছে আমাদের জন্য সেই আনন্দ-উৎসবের দিন। এভাবেই হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে প্রবর্তিত হলো ঈদ।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়: ‘আজি আরাফাত ময়দান পাতা গায়ে গায়ে/ কোলাকুলি করে বাদশাহ ফকিরে, ভায়ে ভায়ে’। এক মাস রোজার শেষে ঈদের আনন্দ প্রতিটি মানুষের মনে খুশির দ্যোতনা ছড়ালেও দরিদ্ররা কি সেই আনন্দ ভেলায় ভাসতে পারছে? কবির কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে : ‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিঁদ/মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?’

বিত্তবানেরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ও ফিৎরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দবার্তা হয়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। এ দিকে ঈদের জন্য তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে।

ঈদুল ফিৎর উপলক্ষে রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দীদের জন্য জেলখানায় থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। সরকারি শিশুসদন, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রে থাকবে উন্নত মানের খাবার এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। তবে এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কাপড়ের মার্কেট থেকে শুরু করে মসলাপাতির বাজারও জমে উঠেছে। চলছে কেনাকাটার ধুম। নাড়ির টানে গ্রামের পানে ছুটছে মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। ঈদ মানুষকে কাছে টানে। দৃঢ় করে সামাজিক ও সম্প্রীতির বন্ধন।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কোনো কাজ যেন কেউ না করেন যাতে সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।   

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। এ সময় তিনি দেশবাসী ও বিদেশে বসবাসরত সব বাঙালিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ করোনাকালীন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ঈদুলফিতর উদযাপনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই মহামারি থেকে সকলকে রক্ষা করতে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৩ মে) দেওয়া এক বাণীতে এই আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এ বছর ঈদুল ফিতর এমন একটি সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। করোনা মহামারির কারণে জীবন ও জীবিকা দুটোই আজ হুমকির মুখে। তিনি এই কঠিন সময়ে সমাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান।

 

Link copied!