চট্টগ্রামে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ২৯, ২০২১, ০৭:১৭ পিএম

চট্টগ্রামে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া এক নারীর দেহে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। ৬০ বছরের বেশি বয়সের ওই নারী চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ অ্যাম্ফুটেরিসিন-বি শহরের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি  বিকন ফার্মাসিউটিকেলস এই ওষুধটি তৈরি করত টেরিসিন নামে। কিন্তু বেশ কয়েক দিন যাবৎ বিকন থেকে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এটি একটি দামি ওষুধ। মানুষের মধ্যে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হলে নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকরা এই ওষুধটি প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

বুধবার (২৮ জুলাই) চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই নারী চার দিন আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন।  ওই নারী রোগীর স্বজনরা গণমাধ্যমে জানান, চলতি বছরের ২৫ জুন তার জ্বর আসে। চলতি মাসের তৃতীয় দিনে নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস রিপোর্ট পজিটিভ আসলেও পরবর্তীতে চিকিৎসা নেওয়ার পর গত ১৫ জুলাই তিনি কোভিড নেগেটিভ হন। তবে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে গত ২৪ জুলাই তাকে ফের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভারতে করোনার ডেলটা ধরনের প্রকোপের মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে গত এপ্রিল ও মে মাসে  ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ দেখা দেয়। সাধারণত সুস্থ হওয়ার পর্যায়ে থাকা অবস্থায় করোনা রোগী এই ছত্রাকে সংক্রমিত হয়ে থাকে। সাধারণত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও এইডসের মতো রোগে আক্রান্তদের শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে থাকে বলে  ওই সময় ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছিলেন ।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের এই নারীও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। ওই নারীর পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ওই নারীর  মেয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তার দাঁতব্যথা হয়। এরপর মুখ ফুলে যাচ্ছিল। পরে চোখ ও চোখের আশপাশের জায়গায় লালচে কালো হয়ে যাচ্ছিল। তখন একজন চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয় তাকে। ওই চিকিৎসক রোগীর সিটি স্ক্যান করতে দেন। ওই রিপোর্ট আসার পর তিনি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করেন চিকিৎসকরা। এরপর ২৪ জুলাই তাকে চট্টগ্রামে মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।

রোগীর মেয়ে বলেন, চমেক হাসপাতালে ভর্তির পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মায়ের বায়োপসি করতে দেয়া হয়। বুধবার দুপুরে আসা রিপোর্টে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে। আরো অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুযত পাল গণমাধ্যেম বলেন, ‘এখনই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলা যাবে না। আমরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাসপেকটেড হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি।’

তবে ওই নারীর ছেলের অিভেযাগ, মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার আগের দিন ২৩ জুলাই বাবা করোনায় মারা গেছেন। এখন ওষুধের অভাবে মাকে বাঁচানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, চিকিৎসকরা যে ওষুধ লিখেছেন, তা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস সূত্রে জানা গেছে, ওষুধটি তৈরিতে যেসব কাঁচামাল ভারত থেকে আনা হতো বর্তমানে ওই দেশের সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কারণে রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেখানে অ্যাম্ফুটেরিসিন-বির উৎপাদন বেড়ে গেছে। আর এই কারণে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই ওষুধটির কাঁচামাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে।

Link copied!