জনশুমারি: ২০২১ থেকে ২০২২ সালে এসে জনসংখ্যা কি কমে গেল?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৮, ২০২২, ০৪:৪১ এএম

জনশুমারি: ২০২১ থেকে ২০২২ সালে এসে জনসংখ্যা কি কমে গেল?

সাধারণত প্রতিবছরই দেশের জনসংখ্যা বাড়ে। তবে গত ২০২১ সালে জনসংখ্যা যা ছিল ২০২২ সালের শুমারিতে জনসংখ্যা তার থেকেও কম দেখা গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ২০২১ সালে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। কিন্তু জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর তথ্য অনুসারে, বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানেই দেশে ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৪ জন লোক কমে গেছে যা অস্বাভাবিক বলে অনেকে মনে করছেন। শুমারির ফল প্রকাশের পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিরুপ মন্তব্যও করছেন। দেশের জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৭ শতাংশ থাকায় কিভাবে জনসংখ্যা কমে তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন অনেকে।

বছর ঘুরতেই কমেছে জনসংখ্যা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এমএসভিএবি (৩য়) প্রকল্পের প্রতিবেদনে 'বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক ২০২০' প্রকাশনায় ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। জনসংখ্যা বাড়ার শতকরা হার ১ দশমিক ৩০, গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর, নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৫ বছর, পুরুষের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ২ বছর। যা ২০২০ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার জন।

জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর তথ্য অনুসারে বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। অর্থাৎ বছর ঘুরতেই জনসংখ্যা কমে গিয়েছে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, জনমিতিক তথ্য আমরা মাঠ থেকে যা পেয়েছি, তা সরাসরি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। এটি প্রাথমিক প্রতিবেদন।

এক আদমশুমারির ফল একাধিকবার পরিবর্তন

‘পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১’–এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ ধরা হয়েছিল। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো একে প্রশ্নবোধক বলে প্রত্যাখ্যান করে। ২০১২ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের জনগণনা সংশোধন করে বলা হয়েছে, দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার। এই সংখ্যা আদমশুমারির প্রাথমিক ফলাফল থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ বেশি। এখানে দেখানো হয়েছে বিগত দশকে জনসংখ্যা ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ করে বেড়েছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির নতুন বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৭।

অর্থাৎ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৪ থেকে ১ দশমিক ৩৭ করা হয়েছে, যা প্রশ্নবোধক। পরে আবারও বিবিএস কোনো জনগণনা ছাড়াই নতুন একটা জন্মহার দিয়ে (১ দশমিক ২৭ শতাংশ) কিউমেলেটিভ হিসেবে করে ২০১৮ সালে নতুন জনসংখ্যা নিয়ে হাজির হয়েছে। বিবিএস দেশে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ জন্মহারের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের জনসংখ্যাকে বর্ধিত করে ২০১৮ জানুয়ারিতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে বলে দেখিয়েছে।

টেকসই উন্নয়নবিষয়ক গবেষক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারিতেই দেখেছি ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ হারের জন্ম হার গুণশুমারির প্রথম গণনায় ১ দশমিক ৩৪, সংশোধিত গণনায় ১ দশমিক ৩৭ হয়ে গেল? উপরন্তু জুন ২০১২–এর মাত্র এক বছর পরেই জুন ২০১৩–তে ঠিক কীভাবে দেশের জন্মহার আরও কমে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ হয়ে গেল? অথচ এর মধ্যে নতুন কোনো শুমারি বা সমীক্ষা হয়নি। এভাবে জরিপ ছাড়াই ‘ভিত্তি বছর’এবং ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’ পরিবর্তন করা পরিসংখ্যান মানের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।

চূড়ান্ত ফলাফলে কি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে?

পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, জনশুমারি দশ বছর পরপর হলেও প্রতি বছরের তথ্য সমন্বয়ের জন্য পরিসংখ্যানের উপকরণগুলোর ওপর ভিত্তি করে জনসংখ্যার হিসেব করে। যার ফলে তবে নির্ধারিত কিছু এলাকার মৃত্যু, বিয়ে, আগমন বা বহির্গমনসহ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে জনমিতি সম্পর্কিত সূচক সমূহ প্রকাশ করার কারণেই জনসংখ্যার তথ্যে কম বেশি দেখা যায়।

কিন্তু জনশুমারি একটি মাঠ পর্যায়ের হিসেব থেকে করা হয় সেহেতু এটাকেই চূড়ান্ত ধরা হবে। যদিও প্রাথমিক ফলাফলের পর অনেক বিষয় পরিবর্তন হবে। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যার পরিমানও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

Link copied!