ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০১:১৫ এএম

ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে তিনি একথা  বলেন।

শেখ হাসিনার পর একই স্থানে বিবৃতি দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।যৌথ বিবৃতির আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৮ টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং আমি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আদ্যোপান্ত আলোচনা করেছি। আমরা খুব খুশি যে, আমরা বাংলাদেশ-জাপান বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছাতে পেরেছি।”

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের দুই দেশের জনগণ ও সরকারের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সামনের দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।”

সই হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দুই পক্ষ কৃষি, শুল্ক সংক্রান্ত, প্রতিরক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, শিল্পোন্নোয়ন, মেধা সম্পদ, জাহাজ রিসাইক্লিং, এবং মেট্রোরেল বিষয়ে যেসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, ভবিষ্যত সহযোগিতার ক্ষেত্রে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে।”

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের বিষয়টিও স্থান পায়।

এবিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অতিরিক্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কারণে স্থানীয় জনগণের জীবন ও জীবিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি “

এসময় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আরও বলেন, “আমরা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে তাদের(জাপানের) যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার জন্য জাপানকে অনুরোধ জানিয়েছি।”

বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হওয়ায় জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং জাপান সরকারের আতিথেয়তায় আমি এবং আমার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গভীরভাবে মুগ্ধ।”

এসময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, “জাপান বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। যে কয়েকটি দেশ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দিয়েছিল জাপান তাদের মধ্যে একটি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও  বলেন, “ ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক জাপান সফরের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।”

বৈঠক শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছানে এখানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থণা জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে লাল গালিচা সংবর্ধণা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দ্বিপাক্ষিক সফরে টোকিও আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী টোকিওর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। একইদিন জাপানের চারজন নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করবেন সরকারপ্রধান।  বাংলাদেশ সরকার এর আগেও বেশ কয়েকজন জাপানিকে এ সম্মান প্রদান করেছে।

২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরের সময় আরও কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সাক্ষাতে অংশ নেবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

একই দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিওতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং জেট্রোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন।

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ও কমিউনিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

এছাড়া, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহধর্মিণী আকি আবে ও জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও দেখা করবেন। জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘এনএইচকে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করবে।

জাপান সফর  শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করবেন। আসছে ৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

Link copied!