পোষা প্রাণী: আইন আছে যদিওবা, কিন্তু নেই প্রয়োগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৪, ২০২২, ১২:৪৪ এএম

পোষা প্রাণী: আইন আছে যদিওবা, কিন্তু নেই প্রয়োগ

সিনেমার রূপালি পর্দায় প্রায়শঃই পোষা প্রাণী দেখানো হয়। বাসাবাড়িতেও প্রাণী পালন করেন অনেকে। রাজধানীর জনপ্রিয় পোষাপ্রাণীর মার্কেট নীলক্ষেতেও দেদার পশুর দেখা মেলে। কিন্তু অনেকেই জানেন না পোষা প্রাণী নিয়ে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে। ফলে সেটি খোলা বাজারেই হোক, আর সিনেমার পর্দা বা বাবাসাড়িতেই হোক— সবাই প্রায় প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ঘটিয়ে ফেলছেন।

পোষাপ্রাণী নিয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি তরফে নানা সংগঠন-সংস্থা রয়েছে। পোষাপ্রাণী নিয়ে সোচ্চার সবাই। কিন্তু এত সচেতনতা বাড়ানোর পরও আইন না জানার কারণে প্রকাশ্যেই প্রাণীদের প্রতি অমাণবিক আচরন করতে দেখা যায়। ওদিকে আইন থাকলেও আইনের ফাঁকফোকরও রয়ে গেছে। দেশের আইন এবং আন্তর্জাতিক আইনের অমিল বা বৈষম্যও রয়েছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, পোষা প্রাণীদের থাকার জায়গা কেমন হবে সেটি নিয়ে কানাডার Pet Industry Joint Advisory Council of Canada (PIJAC) একটি মানদন্ড নির্ধারন করে দিয়েছে। ওই কাউন্সিল বলছে, মোটামুটি ওজনের একটি কুকুরের বসবাসের জন্যে ৬ ফিট/ ৬ ফিট থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এর চেয়ে বেশি হলে সাড়ে ছয় ফিট বাই সাড়ে ছয় ফিট জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।

আর যদি পোষ্য প্রাণীটি বিড়াল হয়, সেক্ষেত্রে ৪ ফিট/৪ ফিট জায়গার ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

কাঁটাবনের মত একটি পোষাপ্রাণী বেচা কেনার মার্কেটে নেই এরকম কোন সুব্যবস্থা। আড়াই ফিট/ দুই ফিট জায়গার মধ্যে প্রাণীদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। PIJAC এর সংজ্ঞা যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে এই মার্কেটের প্রাণীগুলোর ওপর নির্মমতাই চালানো হচ্ছে।

সরেজমিনে রাজধানীর পশুপাখির এই মার্কেটটির প্রায় সব দোকানেই দেখা গেছে আড়াই ফিট/ আড়াই ফিট খাঁচার মধ্যে রাখা হয়েছে কুকুরগুলোকে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দোকানীরা দাবি করেন, এগুলো তো বড় খাঁচা-ই। এর চেয়ে বড় খাঁচায় কোথাও রাখা হয় না কুকুর-বিড়ালকে। 

ইখলাছ আলী নামের এক পশু বিক্রেতা জানালেন, এক দোকানে এত পশু রাখা হয়। খাঁচা বড় করলে সেসব খাঁচা দোকানে ধরবে না। ফলে এত পশুপাখিও রাখা সম্ভব না। আমরা পশুর সাইজ অনুযায়ী দেখে শুনেই খাঁচা নির্বাচন করি। তারা যেন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে সেই কথা মাথায় রেখেই তাদের রাখা হয়।

দেশের প্রচলিত আইনে খাচায় কিংবা বাসায় পশুপাখি রাখার জাগয়ার উল্লেখ সেভাবে নেই। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ধারা ৩৮-১, ৩৮-২, ৪০ ও ৪৬ ধারার আইনে বলা আছে, বন্যপ্রাণীকে খাঁচায় লালন পালন বা নিজের দখলে রাখলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের জেল হতে পারে।

প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ২০১২-এর ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অকারণে শুধু সহিংসতা প্রদর্শনে কোনো প্রাণীকে হত্যা করে তাহলে তিনি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা ১ বছর কারাদন্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পাখি ক্রয়-বিক্রয়ে আমাদের দেশের আইন আরও বেশি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাখি ক্রয়-বিক্রয় ও বাসায় বন্দি করে রাখলে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

সিনেমায় কোন প্রাণীর প্রতি সংহিসংতা প্রদর্শন করা হলে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ২০১২-এর ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অকারণে শুধু সহিংসতা প্রদর্শনে কোনো প্রাণীকে হত্যা করে তাহলে তিনি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা ১ বছর কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কিন্তু বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক উল্টো দেখা যায়। সিনেমায় ভিএফএক্সের বদলে বাস্তব প্রাণী আটকে রেখেই প্রদর্শন করা হয়। এমনকি পরবর্তীতে রূপক অর্থে সেগুলো হত্যার চিত্রও দেখানো হয় যা আইনের বিপরীত।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পশুপাখির লড়াই হয়। যেমন, নড়াইলে ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের লড়াই প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক ষাড় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া সিলেটেও ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন হয়।

পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, টঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘আসিল মোরগের’ লড়াই দিন দিন বিস্তার লাভ করছে। এই মোরগ লড়াইয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমৃত্যু লড়াই হয়ে থাকে।

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বললেন, পশুর প্রতি মানুষের আচরণ হওয়া উচিত – একজন মানুষের প্রতি মানুষের আচরণ যেমন, ঠিক তেমনই। প্রাণীরা আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের প্রতি মানুষের ‘ভায়োলেন্স' বা সহিংসতার সূত্রপাত হয় পশু-পাখির প্রতি ‘ভায়োলেন্স' থেকে।

Link copied!