বাড়ছে শহর ছেড়ে গ্রামে ফেরার প্রবণতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৭, ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম

বাড়ছে শহর ছেড়ে গ্রামে ফেরার প্রবণতা

সংগৃহীত ছবি

সময়টি ২০২০ সাল। মহামারি করোনায় কাজ হারিয়ে বাড়িভাড়া, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে না পেরে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে ফিরেছেন নিজ গ্রামে। সংখ্যাটি ঠিক কত তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। ২০২৩ সালে এসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস জানিয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে শহর ছেড়ে গ্রামে ও এক শহর থেকে অন্য শহরে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে শহরে বসবাসকারী প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে ৬ জন গ্রামে ফিরে গেছেন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জন।

গবেষক ও অর্থনীতিবিদের মতে, করোনার সময় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল, তার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি; বরং দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ সংকট তীব্র হয়েছে। ফলে বেচে থাকার তাগিদে মানুষ শহর থেকে গ্রামের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) গবেষণা থেকে জানা যায়, করোনাকালে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচ, যোগাযোগের খরচ বেড়ে যাওয়া ও নানামুখী ব্যয় মেটাতে না পেরেই রাজধানী ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্তত ১৬ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমেছে। এর সঙ্গে বাড়তি চাপ হিসেবে রয়েছে মূল্যস্ফীতি। এসব কারণে দরিদ্র মানুষ যে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, সেটিই বিবিএসের জরিপের তথ্য আমাদের দেখাচ্ছে। মানুষ এখন টিকে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গ্রাম কিংবা শহর যে যেখানেই আছেন, তারা বেঁচে থাকার চেষ্টার অংশ হিসেবে অন্যত্র স্থানান্তর হতে চাচ্ছেন।’

বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, জীবিকার তাগিদে গত বছর দেশের অভ্যন্তরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আগের বছরের তুলনায় হাজারে ৬ জনের বেশি অভিবাসী হয়েছেন এবং প্রতি হাজারের বিপরীতে দ্বিগুণের বেশি মানুষ দেশের বাইরে অভিবাসী হয়েছেন। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে ৩ জন দেশ ছেড়ে বিদেশে অভিবাসী হয়েছিলেন। গত বছর এ সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে হাজারে ৬ দশমিক ৬।

অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ক্ষেত্রে শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়লেও, কমেনি গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যাও।

২০২১ সালে প্রতি হাজারে ৪৮ জন গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫।

পিপিআরসি ও বিআইজিডি জানিয়েছিল, বাসাবাড়িতে কাজ করা মানুষ, যাঁদের বেশির ভাগই নারী, তাঁদের মধ্যে কাজ হারানোর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন খাতের অদক্ষ শ্রমিক তো আছেই।

গবেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। যার প্রভাব পরে বাংলাদেশেও। এতে করে চাপে পড়ে সাধারণ মানুষ। চলতি বছরও মানুষের ওপর এ চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য কর্ম হারানো এবং শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতা কমেনি।

Link copied!