মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৪:৩৭ এএম

মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মালামাল নিয়ে আসা রুশ জাহাজকে নোঙর করতে না দেওয়ার ঘটনায়  মস্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। মস্কোর এ সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার ঢাকা প্রতিক্রিয়া জানাবে বলেও তিনি জানান।

বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মস্কোয় আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাশিয়ার যে বৈঠক হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে যখন যেখানে যে ভোটিং ভেটিং দরকার ছিল, সেটা আমাদের নীতিগত অবস্থান থেকে আমরা সব সময় করেছি। এ নিয়ে জাতিসংঘে আরও একটি রেজ্যুলুশনও আসছে।”

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, “পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় থাকা ৬৯টি রুশ জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে মস্কোয় নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব ক‌রে‌। সেখানে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাশিয়ার যে বৈঠক হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”

প্রসঙ্গত, রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার জাহাজগুলো বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ওই জাহাজগুলো সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে চাইলেও পারেনি। মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

মস্কো জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী রাশিয়ার জাহাজ দেশটির বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়ে দেশটির কূটনৈতিক মিশনের প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ চরিত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলোও রাশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তলবের বিষয়টি ঢাকার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।

রুশ বার্তা সংস্থা তাস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গত সপ্তাহে ঢাকায় নিয়োজিত রুশ রাষ্ট্রদূত তাদের নিশ্চিত করেছেন।

রাশিয়া গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে দেশটির মালিকানাধীন অনেক জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো।

গত ২৪ ডিসেম্বর উরসা মেজর নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জানতে পারে, সেটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ। যেটি রঙ ও নাম বদল করে উরসা মেজর নাম দেওয়া হয়। এর ফলে বাংলাদেশ জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে। যদিও জাহাজটিকে বন্দরে পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে চাপ সৃষ্টি করে রাশিয়া। তবে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকে ঢাকা।

Link copied!