রপ্তানির সময় রাস্তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরি, বিপাকে বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৭:১৫ পিএম

রপ্তানির সময় রাস্তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরি, বিপাকে বিজিএমইএ

জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ক্রেতা ভিডিও এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানায় যে প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পায়নি। এমনকি কিছু কার্টন খালি ছিলো। ওই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিলো। প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। পোশাক কারখানা থেকে শিপমেন্টে গেলেও মাঝপথেই রাস্তায় চুরি হয় তৈরি পোশাক। আর সুকৌশলে সমপরিমাণ ওজনে মাটি কিংবা ঝুট রেখে দেয়া হয়। যে কারনে শিপমেন্ট প্রতিষ্ঠান বুঝতে পারেনা।

গত ২০২২ সালেই প্রায় ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর এই ধরনের চুরির ঘটনায় জড়িতদের আটক ও শাস্তি দেয়ার দাবি জানান বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। মঙ্গলবার বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আটক হলেও ছাড়া পাচ্ছে অপরাধীরা

ব্রাজিলের বায়ারের পণ্য চুরির বিষয়ে র‍্যাব এই চক্রের হোতাসহ ৪জনকে গ্রেফতার এবং যে কাভার্ড ভ্যানে করে তারা ব্রাজিলের পণ্য চুরি করেছিলো, সেই কাভার্ড ভ্যান জব্দ এবং সঙ্গে চালানও সংগ্রহ করেছে। চক্রের প্রধান হোতা, শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭/১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দু'টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছে যে, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করে। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে।

কিন্তু প্রতিবারই জামিন পাওয়ার পর সে পুরানো পেশায় ফিরে এসেছে। এই ধরনের অপরাধীরা কিভাবে এত সহজে জামিন পায় সেটি আমাদের প্রশ্ন। এতে করে তারা পরবর্তীতে আরও গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করে না ।

পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে বিজিএমইএ

যাঁরা পোশাক শিল্পের রপ্তানি পণ্য লোপাট করছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক- এ ব্যাপারে আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশক্রমে সকল সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি বহুবার আলোচনা করে এ ধরনের চুরি বন্ধ করার লক্ষ্যে আইন সংশোধনসহ কতিপয় প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করেছে যা এখনো সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রস্তাবগুলো হলো:

১) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ দ্রুততম সময় আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা। ২) এ ধরনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।

৩) কতিপয় নাম সর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল ক্রয় করে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টকলট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহনের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।

৪) এদেরকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে।

৫) কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী মালিক সমিতি, কাভার্ড ভ্যান চালক এবং হেলপারদের ডাটাবেইজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাকখাত থেকে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে পোশাক শিল্পের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের অবশ্যই কঠোরতম শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে। কারন রপ্তানিমুখী পোশাক চুরির ঘটনা জাতীয় অর্থনীতিতে চুরির অন্যান্য ঘটনার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলে এবং যদি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, তাহলে বিদেশী ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।

Link copied!