বাজেট ২০২৩-২৪

২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

জুন ১, ২০২৩, ০৪:৪২ এএম

২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ

"২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ"- এমনই মূল দর্শন নিয়ে বৃহস্পতিবার (১ জুন, ২০২৩) জাতীয় সংসদে পেশ হতে যাচ্ছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এদিন বিকেল ৩ টায় জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করবেন।

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা পঞ্চম ও শেষ বাজেট। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি‍‍`র এটি পঞ্চম বাজেট।

গত দেড় দশকে বর্তমান সরকারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ অনেকগুলো অর্জন ২০৪১ সালের স্বপ্ন পূরণের পথে একটি টেকসই গ্রাউন্ডওয়ার্ক বা ভিত্তিপ্রস্তর তৈরী করে দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, "স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনোমি।"

সঙ্গত কারনেই এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধিও।

সরকারের সমালোচক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলে আসছেন এ বাজেট হবে সরকারের জন্য চ্যালেন্জিং। তাদের মতে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, লক্ষ্যিত অতিরিক্ত করের বোঝা, আন্তর্জাতিক বাজার ও ভূরাজনৈতিক পরিস্হিতি মিলিয়ে দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও একইসঙ্গে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে না।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা এও বলেছেন, সবকিছুর দাম বাড়িয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি কিভাবে হবে তা তাদের বোধগম্য নয় বলেও জানিয়েছেন তারা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট

পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়িয়ে এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটিসহ মোট বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় বা এডিপি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। আর সরকারের পরিচালন ব্যয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটিসহ মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।

বাজেটে অর্থসংস্হানের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

এ ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্হা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ও স্বল্পমেয়াদী ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ ২৩ হাজার কোটি টাকা ও এর বাইরে সঞ্চয়পত্র থেকে আরও ১৮ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এছাড়াও বৈদেশিক ঋণ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্হা হতে আগাম পাওয়া তথ্য বলছে, আসছে বাজেট প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়িতে খরচ বাড়াবে, একাধিক গাড়ী ব্যবহারকারীদের ব্যয় বাড়বে, দেশে ও বিদেশে ভ্রমন ব্যয় বাড়বে, প্রবাসী শ্রমিকদের খরচ বৃদ্ধি পাবে, মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক, আমদানীকারক ও ব্যবহারকারী সবার ব্যয় বাড়বে, কলম, টিস্যু, ন্যাপকিন, প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারসহ গৃহস্থালির পণ্যের ব্যয় বাড়বে।

এ ছাড়া সব ধরনের সিগারেটের মূল্যস্তর ও শুল্ক—দুটিই বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। যেসব সিগারেট কোম্পানি টার্নওভার কর দেয়, তাদের করহার ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সুত্র জানায়, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১৫ শতাংশ বসতে পারে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি করলেও ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। এর ফলে স্থানীয় বাজারে এর দাম বাড়বে।

তবে, ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ভ্যাট ছাড়ের সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে কলকারখানা স্থাপনের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। ফলে এই অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের ব্যয় বাড়বে।

ধনীরা সারচার্জে কিছুটা ছাড় পেতে পারেন। বিদ্যমান তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে করের ওপর সারচার্জ দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে সম্পদের সীমা চার কোটি করা হতে পারে।

সর্বনিন্ম আয়করের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে এ সীমা বাৎসরিক তিন লাখ টাকা।

তবে, আগের তিন বছর শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়া হলে উপযুক্ত প্রমাণপত্র জমা করে টিআইএন স্থগিত বা বাতিলের আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া প্রবীণ টিআইএনধারীদের এই সুযোগ দেওয়া হতে পারে। কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মালিকদেরও এই সুযোগ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া কোনো করদাতা মারা গেলে টিআইএন বাতিল করা যাবে।

সরকার আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতে কর বসিয়ে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ থাকছে এবারের বাজেটে।

Link copied!