৪ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আরো ৫ বছর বাড়ানোর দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি

এপ্রিল ১৪, ২০২৩, ০১:৫৮ এএম

৪ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আরো ৫ বছর বাড়ানোর দাবি

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আগামী ২০২৩-২৪ ইং অর্থবছরের বাজেটে ব্যাক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়সীমা করমুক্ত।

এফবিসিসিআই জানায়, বিদ্যমান বাস্তবতায় জীবনযাপন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে করমূক্ত আয়সীমা ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার এ প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া এফবিসিসিআই আসছে বাজেটে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিরজন্য ১৭৯ পৃষ্ঠার বইয়ে বর্নিত ১১৯ টি প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর নিকট পেশ করে। এসব প্রস্তাবে বিভিন্ন খাত ও ইস্যুতে আবগারী শুল্ক ছাড়, কর ও ভ্যাট হ্রাস ও রেয়াত, আ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বা এআইটি হ্রাস ও ছাড়ের দাবি জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এনবিআর ও এফবিসিসিআই-এর মধ্যকার এ প্রাক-বাজেট স্টেকহোল্ডারস পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত  ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মোনিম। এ সভায় সভাপতিত্ব ও মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

কালো টাকা সাদা করা

এফবিসিসিআই এর প্রস্তাবনায় বলা হয় বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখা প্রয়োজন। প্রস্তাবে বলা হয় দেশের আবাসন খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে ফ্ল্যাট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা দরকার।

এফবিসিসিআই জানায়, ফ্ল্যাট, প্লট, বাণিজ্যিক ভবন ও বিপণিবিতানে বিনিয়োগের জন্য আসছে ১০ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা রাখা হলে দেশে জাতীয় সম্পদ ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল আছে। এফবিসিসিআই এ সুবিধা আরও পাঁচ বছর বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে।

এফবিসিসিআই এর অভিমত, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ‘সেকেন্ড হোম’ গ্রহণের সুযোগ থাকায় দেশ থেকে প্রচুর পরিমান  অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীরা করের আওতায় আসবে।

এফবিসিসিআই এর করছাড় প্রস্তাবের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনের করছাড় প্রস্তাবের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন. “দেশের অর্থনীতি যে জায়গায় এসে দাড়িয়েছে তাতে করছাড়ের খুব একটা অবকাশ নেই। কারন এখন রেভিনিউ বাড়ানোর চাপ আছে।”

এসময় তিনি আরও বলেন,"বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বাস্তবতা আপনারা বুঝেন। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর শর্তাবলী সম্পর্কেও আপনারা কমবেশি অবগত। আমাদেরকে অনেক বেশি রেভিনিউ সংগ্রহ করতে হবে।"

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো পথ হলো সক্ষমতা অর্জন করা। আমাদেরকে বৈরী ও প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সরকারের ব্যয় বাড়ছে। আপনারাই করদাতা, আপনারাই জনগণ। আপনাদের উন্নয়নের জন্য সরকারকে ব্যয় করতে হয়। একটা দেশ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হচ্ছে। এই গ্রাজুয়েশনের অনেক চ্যালেন্জ আছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। বাজেটে সব সাপোর্ট আপনাদের দিলে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের চ্যালেন্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না।’

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘দেশে চলমান ডলার সংকট মোকাবেলা করতে আপনাদের বৈদেশিক মূদ্রা আয়ে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

অনলাইনে ভ্যাট ফরম পূরণ করলে হার্ড কপি লাগবে না

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনলাইনে ভ্যাট দিতে ফরম পূরণ করা হলে হার্ড কপি জমা দিতে হবে না। কারা কি কারণে হার্ড কপি চায় তা সংশ্লিষ্ট কমিশনারকে জানান। তিনি ব্যবস্থা নিবেন। প্রয়োজনে আমাকে জানান।’

এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের কর সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা নিরসনে মামলা না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দেন। এনবিআর এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগীতা দিবে বলেও তিনি জানান।

এসময় তিনি আরও বলেন, "একজন আইনজীবি তো আপনাকে মামলা করতেই পরামর্শ দিবে। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। প্রয়োজনে নিজেরা দক্ষ জনবল তৈরি করুন। আমাদের সহযোগীতা নিন। আমরা পথ দেখাবো কর সংক্রান্ত বিষয়ে।"

তি এনবিআর এর দক্ষ জনবলের অভাব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ এ সংকট পূরনে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জনবল সংকটের কারনে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে কোনও কোনও জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।”

রাজস্ব আহরণে এনবিআর যথেষ্ট নয়

রহমাতুল মুনিম বলেন, রাজস্ব আহরণে এনবিআর এর দক্ষতা বা ভূমিকা যথেষ্ট নয়। এজন্য স্টেকহোল্ডারদের কমপ্লায়েন্স দরকার। মালয়েশিয়া এটা করতে পেরেছে বলে তারা এগিয়েছে। তিনি বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের বড় রিফর্ম দরকার।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চট্রগ্রাম বন্দরে সেবায় গতি আনতে বিদ্যমান ৬টি স্ক্যানারের সাথে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ৬ টি স্ক্যানার যোগ হচ্ছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আরও নতুন ৭ টি স্ক্যানার যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, "সরকার চায় ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে। আপনাদের অর্থে বাজেট তৈরি হয়। এজন্যই আপনাদের দাবির প্রতিফলন ঘটাতে সরকারের হয়ে আমরা প্রাক-বাজেট স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন সভা করি। আমাদের চেষ্টা থাকবে দাবিগুলো আ্যাড্রেস করতে।"

Link copied!