৭ মার্চের ভাষণের কপিরাইট নিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৭, ২০২৩, ০৭:৪১ এএম

৭ মার্চের ভাষণের কপিরাইট নিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় কোম্পানি

একাত্তরের সাতই মার্চ। বিকাল ৩:২০ মিনিট। রেসকোর্সের ময়দানের মঞ্চ আগেই প্রস্তুত। সবাই অধীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর নির্দেশ পেতে। এলেন বঙ্গবন্ধু। দিলেন সেই বিশ্ব কাঁপানো বক্তৃতা। বক্তৃতা তো নয় যেন কৌশলে স্বাধীনতারই ঘোষণা। সেই জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা।

রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আপাময় জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ১৯ মিনিটের ওই ভাষণটি ছিলো মুক্তিকামী বাঙালীর প্রাণশক্তি ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওই ভাষণেই স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতির পিতা।

ওই ভাষণটির কপিরাইট এতদিন আমাদের ছিল না। পশ্চিমবঙ্গের ইনরেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভাষণটি নেটে আপলোড করে নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে বসেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটি অডিও-ভিডিও ডিজিটাল কন্টেন্টে বাংলাদেশি কপিরাইট না থাকার সুযোগে জালিয়াতির মাধ্যমে তা দখলে রেখেছিলো ওই প্রতিষ্ঠানটি।  

বাংলাদেশ কপিরাইট সমিতির তথ্য মতে, ভিডিও কন্টেন্টটির শেয়ারিংয়ে সামাজিক মাধ্যম ইউটিউব থেকে রয়্যালটি বাবদ ইনরেকো ইন্টারন্যাশনাল এভাবে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। তবে, চাপের মুখের মালিকানার সেই দাবি এখন ছেড়ে দিয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ঐতিহাসিক এই ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউনেস্কোর সেই স্বীকৃতি পাওয়ার পরেই ঐতিহাসিক ভাষণটির ডিজিটাল লাইসেন্স ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইনরেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নামের ভারতীয় ওই প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সাল থেকে ভাষণটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্নভাবে ও ভিন্ন ভিন্ন নামে অবৈধ ডিজিটাল লাইসেন্স ব্যবহার করে। এভাবে ৯ বছর ধরে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটির প্রচার করে আসছিলো। 

কপিরাইট সমিতি (এলসিএসসিএফ) ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ভাষণটির অপব্যবহার বন্ধ করতে সক্ষম হয়। তবে সেই লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় কপিরাইটের ৭৮ ধারা অনুযায়ী, ৭ মার্চের ভাষণটির নৈতিক মেধাস্বত্বের মালিকানা ফিরেছে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কাছে।

ইউনেস্কোর ফর্ম অনুযায়ী, বাংলাদেশের চারটি জায়গায় ঐতিহাসিক ভাষণটির সম্পূর্ণ মালিকানা রয়েছে। এগুলো হল আইসিটি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এবং বাংলাদেশ বেতার।

কপিরাইটের মালিকানার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু বলা না থাকায় এতদিন বিভিন্ন কোম্পানি ঐতিহাসিক ভাষণটির অপব্যবহার করছিলো।কপিরাইট আইনে, কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৬০ বছর পর কপিরাইট লাগে না। কিন্তু এখনো ৬০ বছর পার না হওয়াতে সুযোগ রয়েছে এ ভাষণের কপিরাইট করার।

ইতিমধ্যে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সব ভাষণ কপিরাইট অফিসে রেজিস্ট্রেশন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের যুগ্ম সচিব মো. দাউদ মিয়া (এনডিসি) দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার পর কপিরাইট এর প্রয়োজন পড়ে না। কেউ যদি কপিরাইট দাবি করে সে ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরোও বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন জাতীয় নেতা। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ চেতনা বোধকে জাগ্রত করে। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ইতিমধ্যে ট্রাস্টের পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুর সব ভাষণ কপিরাইট অফিসে রেজিস্ট্রেশন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কপিরাইট আইনে, কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৬০ বছর পর কপিরাইট লাগে না। কিন্তু এখনো ৬০ বছর পার না হওয়াতে সুযোগ রয়েছে এ ভাষণের কপিরাইট করার। যা নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ কপিরাইট সমিতি।

Link copied!