নোবেলজয়ীরা ঠিক কত টাকা পুরস্কার পান? যদিও নোবেল পুরস্কারের মূল আকর্ষণ সম্মান, এর আর্থিক পুরস্কারও উপেক্ষা করার মতো নয়। অনেক নোবেলজয়ী তাঁদের পুরস্কারের টাকা দাতব্যকাজে দান করেন।
১৯৮০ সালের আগে নোবেল বিজয়ীদের ২৩ ক্যারেট স্বর্ণের পদক দেওয়া হতো। এরপর থেকে ১৮ ক্যারেট ‘সবুজ স্বর্ণে’র তৈরি ধাতব পদকের ওপর ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিজয়ীদের একটি সনদ এবং বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কারও প্রদান করা হয়।
ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। নোবেল ফাউন্ডেশনের জন্য তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা রেখে যান।
শুরুতে নোবেলজয়ীদের প্রায় দেড় লাখ ক্রোনা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হতো। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে, ১৯৮১ সালে এটি ১০ লাখ ক্রোনায় পৌঁছায়। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ক্রোনা হয়।
সর্বশেষ ২০২4 সালে, নোবেল ফাউন্ডেশন পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনায় (৯ লাখ ৮৬ হাজার মার্কিন ডলার) উন্নীত করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ লাখ ক্রোনা বেশি। ফাউন্ডেশনের তহবিলের উন্নতির কারণে এই বৃদ্ধি করা হয়।
তবে ২০১২ সালে ফাউন্ডেশনের আর্থিক সংকটের কারণে পুরস্কারের অর্থমূল্য কমিয়ে ৯০ লাখ ক্রোনা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তা আবার ৯০ লাখে উন্নীত হয় এবং ২০২০ সালে তা ১ কোটি ক্রোনায় ফিরে আসে।
গত এক দশকে সুইডিশ ক্রোনা ইউরোর বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ দর হারিয়েছে। ফলে পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রকৃত মূল্য ততটা বাড়েনি।
বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার মূল্যমান প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার সমান।
Read Also: নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত কে এই ড. ইউনূস?
তবে ১৯৬৮ সালে, সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ৩০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নোবেল ফাউন্ডেশনকে একটি বড় অর্থ সাহায্য করে, যার মাধ্যমে আলফ্রেড নোবেলের সম্মানে অর্থনীতিতে একটি নতুন পুরস্কারের প্রচলন হয়। এর পরের বছর, প্রথমবারের মতো অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রথমদিকে, ১৯০১ সালে যখন নোবেল পুরস্কার চালু হয়, পদকটি খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি হতো। কিন্তু ১৯৮০ সালের পর থেকে পদক তৈরির প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। বর্তমানে পদকটি ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি, যার উপর ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনার প্রলেপ থাকে। এতে পদকটি পুরোপুরি সোনার মতো দেখায়, যদিও ভেতরে এটি সোনার সংকর ধাতু।
নোবেল পদকের ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম, যা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এর ব্যাস প্রায় ৬৬ মিলিমিটার। প্রতিটি পদক একটি শিল্পকর্ম হিসেবে তৈরি হয়, যার ফলে এর আকার ও ওজন সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। পদকের ডিজাইন বিশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়, যার একপাশে আলফ্রেড নোবেলের প্রোফাইল ভিউতে ছবি থাকে।
পদকের অপর পাশে, পুরস্কার অনুযায়ী বিভিন্ন নকশা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, শান্তির নোবেল পদকে দুই ব্যক্তির করমর্দনের দৃশ্য থাকে, যা শান্তির প্রতীক। নোবেল পুরস্কারের মর্যাদা তুলে ধরতে পদকটি সোনায় তৈরি হয়। যদিও এর সোনার মূল্য কয়েক হাজার ডলার হতে পারে, এর আসল মূল্য অসীম, কারণ এটি বিশ্বজুড়ে অনন্য অর্জন ও অবদানের স্বীকৃতি।
নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া অন্যান্য পুরস্কারের তুলনায় দীর্ঘ ও কঠোর, যা এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মনোনয়নের জন্য নির্দিষ্ট একটি ফর্ম থাকে, যা প্রায় ৩০০০ জনের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ থাকে, এবং নোবেল কমিটি প্রায় ৩০০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে মনোনীত করে, যদিও মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হয় না।
যদিও আলফ্রেড নোবেল এই পুরস্কার চালু করেছিলেন, তিনি এর কার্যক্রম নিজ চোখে দেখে যেতে পারেননি। কারণ তার পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে কিছুটা সময় লেগেছিল, যার ফলে নোবেল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায়ও দেরি হয়।