২০১১ সালে ১ ঘণ্টায় ৯৯৩টি চিন আপ দিয়ে গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের স্টিফেন হাইল্যান্ড। গত এক দশকে এই রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করে কেউই সফল হয়নি। অবশেষে এই যুগ-পুরনো বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গ রাজ্যের ফ্র্যাংক সাগোনা। ১ ঘণ্টায় তাঁর দেওয়া চিন আপের সংখ্যা ১০১০টি।
চিন আপের বিষয়ে তো জানেন? এটি শরীরের মাংসপেশি সুগঠিত করা ও মেদ কমানোর এক প্রকার ব্যয়াম। কোনো অবলম্বন ধরে শরীরকে শূন্যে ভাসিয়ে ওঠানো আর নামানো।
৪৫ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক ফ্র্যাংকের পক্ষে রেকর্ডটি গড়া এতটাও সহজ ছিল না। কিন্তু কষ্টের চেয়ে বড় আবেগ লুকিয়ে আছে নতুন রেকর্ডটি গড়তে।
এই রেকর্ডের নিয়ম অনুসারে, একটি আন্ডারহ্যান্ড গ্রিপ ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথ ফর্ম বজায় রাখতে হবে যাতে চিন বা ব্যক্তির চিবুকটি চিন আপ বারের স্তরের উপরে না হওয়া পর্যন্ত শরীরকে উত্থাপন করতে হবে, তারপর বাহু সোজা না হওয়া পর্যন্ত শরীরকে নামিয়ে রাখতে হবে। যারা নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন ও জিম করেন, তাঁরা অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে শর্তগুলি কতটা কঠিন এবং কষ্টকর। ফ্র্যাংক বলেন এটি তার শক্তি ও মনের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল।
এই চিন-আপ চ্যালেঞ্জের সময় ফ্র্যাংক একটি অপ্রত্যাশিত সমস্যার সম্মুখীন হন। রেকর্ডের প্রচেষ্টার আগের দিন পিঠের পেশীতে টান লাগে তার। তবুও প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে রেকর্ড প্রচেষ্টা চালান তিনি। কতটা ডিটারমাইন্ডেড হলে মানুষ তার লক্ষ্য হাসিলে এগিয়ে যায়?
এতটাই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল যে ৪৪ মিনিট পর্যন্ত এসে তাঁর মনে হয়েছে, দম বের হয়ে যাবে। তখনই তার কঠোর পরিশ্রমী বিবেক তাকে সাহায্য করে। তিনি অনুভব করতে লাগলেন যে ফ্র্যাংক আসলেই এটা করতে পারবেন। যেই ভাবা, সেই কাজ... নতুন উদ্যমে এগিয়ে গেলেন এবং সফল হলেন!
আগের রেকর্ডের চেয়ে ১৭টি চিন আপ বেশি দিয়ে পূর্ণ করেন ৬০ মিনিট এবং প্রচণ্ড বমি করতে থাকেন। ফ্রাংকের এর আগেরও দুটি বিশ্ব রেকর্ড আছে। ৮ ঘণ্টার মধ্যে সর্বাধিক ৩৭৫১টি চিন আপ দেওয়া একমাত্র ব্যক্তি তিনি। এছাড়াও ১২ ঘণ্টার মধ্যে সর্বাধিক ৪৬৪৯টি চিন আপ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। সন্তানদের বাবা হওয়ার পর বাড়িতে থেকেই কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা গড়ে ওঠে তাঁর।
১১ বছর আগে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন ফ্র্যাংক। তার বন্ধু এবং ট্রেনিং পার্টনার মাইক রম্ফ রেকর্ড গড়ার ট্রেনিং চলাকালে তিন বছর আগে দুঃখজনকভাবে মারা যান। তাই গিনেস নাম লেখানো এই রেকর্ডটি বন্ধু মাইককে উৎসর্গ করেন ফ্র্যাংক।
তবে দারুণ বিষয় হলো, ফ্র্যাংক কোন বডি বিল্ডারদের মত ওয়েট লিফটিং করেন না। বাড়ির উঠোনে ওয়ার্ক আউট করেন সাথে সঙ্গ দেন তার সন্তানেরা। করেন শুধুমাত্র পুশ আপের মত ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম এবং চিন আপের মতো সাধারণ ব্যায়াম।
তবে একটি রেকর্ড ভেঙেই ক্ষান্ত নন ফ্র্যাংক। বর্তমানে ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ চিন আপের রেকর্ড ভাঙতে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফিটনেস রেকর্ডের পাশাপাশি, ফ্র্যাংকের ইচ্ছা তিনি এক ঘণ্টার মধ্যে করা সর্বাধিক আলিঙ্গনের রেকর্ড ভাঙবেন।