ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামছে বিএনপি

ফাইল ছবি

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির একাধিক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছ থেকে নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ না পাওয়ায় তারা ‘হতাশ’। ফলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের প্রতিটি শহর ও জেলায় সমাবেশসহ অন্যান্য কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তারা।

তবে রাজপথে আন্দোলনে নামার আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনাও করেছে দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা আশা করছেন, ওই বৈঠক থেকে তারা নির্বাচনের সময়সূচি জানতে পারবেন।

একইসঙ্গে বিএনপির শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গেও পরামর্শ করা শুরু করেছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই দলটি ৫ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর বিএনপি জানিয়েছে, হেফাজত আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে দলটির সঙ্গে একমত হয়েছে৷ হেফাজত বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই৷

বিএনপি মনে করে, রাজনৈতিক সংকট সমাধান সম্ভব কেবলমাত্র নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপের মাধ্যমেই। কারণ, তখনই কেবল রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবে।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী বলছে ভিন্ন কথা। তারা নির্বাচনের চেয়ে সংস্কার ও জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারের ইস্যুকে প্রাধান্য দিচ্ছে।  

বিএনপি নেতাদের ধারণা, সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ আরও দীর্ঘায়িত করার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে। দলটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে, তারা যেন কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় সংস্কারটুকু সম্পন্ন করে নির্বাচন দেয় এবং বড় পরিসরের সংস্কার নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে যায়।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘আমাদের অবস্থান অনেকেই বুঝতে পারছেন না। আমরা কখনোই বলিনি নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে। বরং আমরা বলছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য অবশ্যই আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার হতে হবে।’

তিনি এও দাবি করেন যে, বিএনপি সংস্কার চায় না, এমন একটি মিথ্যা কথা প্রচার করা হচ্ছে।  

বিএনপি তার কর্মসূচি দুই ধাপে অনুষ্ঠিত করছে বলে জানা গেছে। আন্দোলনের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই তাদের মূল দাবি। যদিও আন্দোলনের প্রথম ধাপে তারা রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে। আর দ্বিতীয় ধাপে তারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই তারা দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে রাজপথে নামবে। এর জন্য তারা তদের শরিক ও সমমনা দলগুলোকেও সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করবে।

এদিকে গত ২৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এক টেলিভিশন ভাষণে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সংগ্রহ করছে।

ড. ইউনূসের টেলিভিশন ভাষণের চার দিন পর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকা তাদের রাজনৈতিক অদক্ষতার পরিচায়ক। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য।’

বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের আন্দোলন শুরু করলেও এটিকে তারা সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কোনভাবেই অস্থিতিশীল না হয় সেই বিষয়টিও তাদের চিন্তায় আছে বলে জানান দলটির শীর্ষ নেতারা।

Link copied!