ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক রিজভীর, এবার পোড়ানো হলো বিছানার চাদর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১০, ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক রিজভীর, এবার পোড়ানো হলো বিছানার চাদর

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে এবার ভারতীয় বিছানার চাদর পুড়িয়ে দেশটির পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের ভুবন মোহন পার্কে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি বিছানার চাদর পোড়ান। খবর প্রথম আলো অনলাইন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির এই নেতা স্ত্রীর শাড়ি পুড়িয়ে দেন। তারও আগে নিজের গায়ের শাল পুড়িয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার ভুবন মোহন পার্কে ‘দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’ ব্যানারে ভারতীয় পণ্য বর্জন ও দেশি পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে রিজভী ভারতীয় একটি বিছানার চাদর ফেলে দিলে তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠান শেষে কিছু লুঙ্গি ও শাড়ি ১০০ ও ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

বিছানার চাদর ছুড়ে ফেলার সময় রিজভী বলেন, ‘এটা ভারতের রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের একটি টেক্সটাইলের বেডশিট। আজকে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই বেডশিট পুড়িয়ে দিলাম।’

পার্শ্ববর্তী দেশের জনগণকে নয়, তাদের শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারত আমাদের মনে করে গিনিপিগ, মনে করে তাদের অধীনস্থ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। আমরা ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে, এত নারীর সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু তাদের কথা শুনে মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তাদের কাছে বিবেচ্য নয়। আমাদের দেশের লোকজন সেখানে চিকিৎসা নিতে যায়। উদ্দেশ্য থাকে একটু চিকিৎসা নেওয়া, একটু বেড়ানো। কতটুকু মন ছোট হতে পারে তাদের।’

রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কী হয়েছে আমাদের? আমাদের একজন ভয়ংকর ফ্যাসিস্টকে ছাত্র-জনতা তাড়িয়েছে। তিনি ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এই জন্য আমাদের এত কষ্ট, এত ব্যথা। আজগুবি অপপ্রচার দিচ্ছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। অপতথ্য, অপপ্রচার দিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের যে ভাবমূর্তি, এখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ, এটাকে নস্যাৎ করার জন্য এটা করা হচ্ছে।’

রিজভী মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রায়ই সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। এ জন্য বিশ্বের অনেকে তাদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার দেয়। আসামে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী বলছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার। গুজরাটে দুই হাজারের মতো মুসলিম নর-নারীকে হত্যা করা হয়। এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে সময় সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। আপনারা সেটা ভুলে গেছেন। আপনারা প্রত্যেক জায়গায় বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার করছেন।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনারা বড়াই করেন, পেঁয়াজ, আলু, রসুন, চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেবেন। আরে, গত বছর থেকে আলু আমদানি করেছে শেখ হাসিনা। ২০২৩ সালের আগে আলু আমদানি করা হতো না। আমরা পেঁয়াজ রপ্তানি করেছি। ২৭ থেকে ২৮ লাখ টন পেঁয়াজ দরকার হয় বাংলাদেশে। আর আমাদের উৎপাদন হয় প্রায় ৩৭ লাখ টন। এটা নানা কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। ভারত থেকে কোটি কোটি ডলার দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আমাদের সরবরাহ, ব্যবস্থাপনা যদি ঠিক করা যায়, পেঁয়াজ ভারত থেকে কেউ নিবে না। চালও কখনোই নেবে না।’

বাংলাদেশ কারও ওপর নির্ভরশীল নয় মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘ভারত মনে করেছিল আমরা বোধ হয় তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের ছাড়া চলবে না। এখন তো দেখা যাচ্ছে বিষয়টা অন্য রকম। কলকাতা নিউমার্কেট বন্ধ, হাসপাতালগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। আমাদের উপহাস করবেন, বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন, হাজার বছরের সম্প্রীতির দেশকে কলুষিত করবেন। আপনারা নিজেরা কলঙ্কিত। আমাদের জামদানি শাড়ি, টাঙ্গাইল শাড়ি পৃথিবী বিখ্যাত। রাজশাহীর সিল্কও পৃথিবী বিখ্যাত। এ দেশের নারীরা কেন ভারতের শাড়ি কিনবে? ভারত যখন আমাদের উপহাস করে, ঘৃণা করে, তাহলে কেন তাদেরটা কিনব? এখানে সবই উৎপাদন করা হয়। আমরা কারও অধীন থাকব না। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াব। ভারতের বন্ধুত্ব তো শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেই বন্ধু হারিয়ে ফেলেছে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী। এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার, মহানগরের সদস্যসচিব মো. মামুন-অর-রশিদ প্রমুখ।

Link copied!