অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০২:৪৯ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বসা নিয়ে জাতীয় পার্টি আগ্রহী হলেও দলটির নেতাদের সে আশা পূরণ হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার প্রধানের সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকারের ঘনিষ্ট মিত্র ছিলো জাতীয় পার্টি। কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন, আবার কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে বিরোধীদলে বসেছে দলটি।
গত পাঁচই আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে থেকে সুর বদলাতে থাকে সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির নেতারা। শেখ হাসিনার পতনের পর পুরোপুরি সুর পাল্টে আওয়ামী লীগের কড়া সমালোচনায় নামে জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
নতুন সরকার দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করলে জাতীয় পার্টি প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। এর আগে দুই দফায় সংলাপ হলেও সেখানে তারা আমন্ত্রণ পাননি। তাই এবার আমন্ত্রণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকার কথা বলে আসছিলেন দলটির নেতারা।
কিন্তু সেটা না পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সরকারের কাছে দৃশ্যত অনেকটা ব্রাত্য হয়ে পড়ায় দলটির নেতাদের মধ্যে হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে।
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সরকার হয়তো জাতীয় পার্টির মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না, সে কারণে আমাদের সংলাপে ডাকেনি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
চুন্নু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব সামলেছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর ভাই জিএম কাদের ও এরশাদপত্নী রওশাদ এরশাদ জাতীয় পার্টি ভাঙার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু।
শনিবার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে হবে আলোচনা।
এর আগে গত পাঁচ অক্টোবর বিএনপিসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনক হয়েও সরকারের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় পার্টি কেনো আমন্ত্রণ পাচ্ছে না, স্বাভাবিকভাবেই আসছে এ প্রশ্ন।
প্রথম আলোকে সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলটির ব্যাপারে আপত্তির কারণে তাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
‘সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী বা দোসর ছিল জাপা। সে কারণে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলটির ব্যাপারে আপত্তি আসে। সেটি বিবেচনায় নিয়েছে সরকার।’
জাতীয় পার্টির নেতারা অবশ্য জোর দিয়ে বলে আসছেন যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তারা সমর্থন দিয়েছেন, এমনকি হামলা-মামলারও শিকার হয়েছেন। এরপরও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং রাজপথেই প্রতিবাদ জানাবেন তারা।
আরও পড়ুন: আন্দোলনে অংশ নিয়েও বৈষম্যের শিকার জাতীয় পার্টি: জিএম কাদের
গত বৃহস্পতিবার জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে, সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করবো।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে অবিচার করা হচ্ছে মন্তব্য করেন তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এর প্রতিবাদ করা হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার।