মার্চ ২৭, ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
‘যারা আজকে ভারতবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে, বলছে ইন্ডিয়া আউট তারা আসলে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আউট হয়ে গেছে । তারাই পাকিস্তান পন্থী, পাকিস্তানি যে আদর্শ সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।’
বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকায় মতিঝিলস্থ বিআইডব্লিউটিএ ভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃব্য এসব কথা বলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করেছিলেন বলেই ভারতবিরোধী। রাজনীতিতে যখনই পরাজিত হয়ে যায়, জনগণ থেকে যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখনই ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়। ভারতবিরোধী স্লোগান মানেই সাম্প্রদায়িক। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। লক্ষ মানুষ জীবন দেয় নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করলে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২০২৪ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত আউট কর্মসূচি মানেই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে এখানে আহবান জানানো। জঙ্গি তালেবানীর শাসন প্রতিষ্ঠা করা। দেখেছি ২০০১ সালের পরে শাইখ আব্দুর রহমান বাংলা ভাইদের তান্ডব। আমরা সে জায়গায় ফিরে যেতে চাই না। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী একটা ভূখণ্ডে পরিণত করা হয়েছিল। ’
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পটভূমি নিয়ে ডেইলি স্টার যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেখানে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেননি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের দুটি ধারাকে লালন পালন করেছেন। এবং সময়মতো তিনি কিন্তু একত্রিত করেছেন এটা অন্য কেউ করেনি। তিনি নিউক্লিয়াস গঠন করেছেন। তিনি ফ্রন্ট গঠন করেছেন ফোর্স গঠন করেছেন। আমরা আর কাউকে পাইনি। যারা বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ করতে চায় তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে সহ্য করতে পারছে না।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কেন সোনার বাংলা হয়ে গেল। সারা পৃথিবীতে বিস্ময়কর একটা জায়গায় চলে গেল , কেন বিশ্বের রোল মডেল হয়ে গেল? উন্নয়নের জন্য এটা তাদের মনে কষ্ট কারণ তারা এটা চায় না। তারা সবসময় প্রভুত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে চায়। বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াক স্বাবলম্বী হোক এটা তারা চায় না এজন্য তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে খাটো করতে চাচ্ছে। বাকশাল একটা উন্নয়ন কর্মসূচি এই কর্মসূচিকে রাজনীতি করণ করে সেটা কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলে, ‘এর পেছনে একটাই কারণ এদেশের স্বাধীনতা সুখ যেন আমরা না পাই। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো ১৯৭২ সালের পরে আমেরিকান স্ট্রিট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের সম্পর্কে একটা কমিটি গঠন করেছিল, যে কমিটিতে দশজন সদস্যদের মধ্যে সাত জন লবিন লোরিয়ার। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি তারা গবেষণা করে দেখলো বাংলাদেশের কোন ভবিষ্যৎ নাই। এখানে সাহায্য সহযোগিতা করে কোন লাভ হবে না। এটাই এত অসুস্থ একটা রোগী এটাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশের দিকে না তাকিয়ে অন্য কোন রাষ্ট্রের দিকে তাকানোর জন্য। খুনি হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। আমেরিকার যে থিওরি তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারতো ।’
‘শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয় তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সকলকে ও সহযোগীদের কেউ হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র ব্যক্তি কিংবা পারিবারিক হত্যাকাণ্ড নয় এ হত্যাকাণ্ড একাত্তরের বিজয়ের পরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হত্যা করা হয়েছে। একটি দেশকে হত্যা করার জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তারই উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন। ৭৫ এর পরে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতার এই মাসে আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি আমাদের স্বাধীনতা অর্জন উৎসবের তখন আবারো পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় ভারত আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করেছে আমরা যদি ভুলে যাই তাহলে আমরা কেমন মানুষ হলাম। এক কোটি মানুষ শরণার্থী শিবিরে ছিল। তারা তাদের আশ্রয় দিয়েছে। খাইয়েছে পড়িয়েছে শিক্ষা দিয়েছে। ট্রেনিং দিয়েছে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। সম্মিলিত মিত্র বাহিনী।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সম্মিলিত মিত্র বাহিনী হিসেবে তারা সরাসরি অপারেশনে গিয়েছে। ১৭ হাজার ভারতীয় সৈন্য এই মাটিতে ঘুমিয়ে আছে। স্বাধীনতার জন্য। আমাদের মাতৃভূমির জন্য হানাদার বাহিনী থেকে রক্ষা করতে। তাদের যে ত্যাগ এটা কি আমরা ভুলে যাব। আজকে ভারত বর্জন ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। এ স্বাধীনতার জন্য অনেকের সংগ্রাম করেছেন অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কবি-সাহিত্যিক। কারো কথায় স্বাধীনতা আসেনি। বাংলার সম্পদ দিয়ে লন্ডন শহর তৈরি করা হয়েছে কলকাতা শহর তৈরি করা হয়েছে। ইসলামাবাদ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় নাই। বঙ্গবন্ধু সেটা জানতেন এবং সেই পরিবর্তনটাই তিনি করতে চেয়েছিলেন।’