ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে গত পাঁচ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার টানা দেড় দশকের শাসন। ওইদিনই তিনি ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
এরপরই রাজনীতির মাঠে আবির্ভুত হন প্রায় ১৮ বছর কোনঠাসা থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা। পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের করায়ত্বে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখন নিতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। হাট, বাজার থেকে শুরু করে ব্যাংক, বীমা এমনকি গণমাধ্যমও বাদ যায়নি। অভিযোগ ওঠে মামলা বাণিজ্য করার।
বিএনপির এই আচরণে নতুন শপথ নেয়া সরকারের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে নব্য দখলদারদের সতর্কও করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেও দলের নেতাদের একাধিকবার হুঁশিয়ারি দেন।
কিন্তু তাতেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি পরিস্থতি। এক পর্যায়ে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্টের পর শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির ১ হাজার ৩১ জন নেতাকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে আরও ১ হাজার ২০৩ জনকে।
এতো গেলো কেন্দ্রীয় হিসাব। এই বাইরেও জেলা, মহানগর এবং উপজেলা পর্যায়ে- বিএনপির বহু নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদলসহ সহযোগী বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনও শত শত নেতাকে শাস্তি দিয়েছে।
সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে।
কিন্তু কঠোর এই পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণে এসেছে? গণমাধ্যমমের প্রতিবদনগুলোতে বলা হচ্ছে,দল থেকে বহিষ্কার, মামলা করেও বিএনপি নেতাকর্মীর একাংশকে দখল, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যের মতো অপকর্ম থেকে ফেরানো যাচ্ছে না।
আবার জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিএনপির নেতাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্য প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিকে চাঁদাবাজ, দখলদারদের দল হিসেবে দেখানোর চলছে অতিরঞ্জিত প্রচারণা। নির্বাচনে সুবিধা পেতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব সামাজিক মাধ্যমে তা চালাচ্ছেন। বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করায় উপদেষ্টারাও একই ভূমিকা নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ফ্যাসিবাদ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার: মির্জা ফখরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিএনপি নেতাকর্মীকে ইঙ্গিত করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কথা বললেও পুলিশ কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করছে না।
আবার অভ্যন্তরীণ শাস্তির ক্ষেত্রে বিএনপিতেও দেখা যাচ্ছে দ্বৈতনীতি। তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ পাওয়ামাত্রই সাজা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রভাবশালী অনেকের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দলে নেতারা একে অপরকে অপকর্মের অপবাদ দিচ্ছেনন বলে উঠে এসেছে।