পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ যেকারণে নিষিদ্ধ করলো মমতা সরকার

বিনোদন ডেস্ক

মে ৯, ২০২৩, ০৫:০৪ এএম

পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ যেকারণে নিষিদ্ধ করলো মমতা সরকার

বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ এবার পশ্চিমবঙ্গেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, পশ্চিমবঙ্গের কোনো সিনেমা হলে এই ছবিটি চালানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

আদালতে লড়াই করে মুক্তি দিতে হয়েছিল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। কোনও তারকা অভিনেতা না থাকলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র দু’দিনে ১৯ কোটি ২৫ লাখ রুপি আয় করেছে ছবিটি। বিজেপিসহ গেরুয়া শিবির এই ছবির সমর্থনে আওয়াজ তুলেছে।

টিজার দেখতে এখানে ক্লিক করেন

এমনকী খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখেও শোনা গেছে এই ছবির প্রশংসা। তারপরও যে রাজ্যকে কেন্দ্র করে ছবিটির নামকরণ সেই রাজ্য থেকেই নামিয়ে ফেলা হয়েছে ছবিটি। শুধু তাই নয়, দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুর সিনেমা হল থেকেও সরানো হয় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এবার নিষিদ্ধ হলো পশ্চিমবঙ্গেও।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটির প্রশংসা করে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই ছবি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সুর তুলেছে। তবে ‘ইসলাম বিরোধী’, ‘প্রোপাগান্ডা’ এবং মুসলিম বিদ্বেষী বলে আখ্যা দিচ্ছে বাম-কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দল। এমনকি বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলোতে এই ছবি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। একই সুরে কথা বলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এ সিনেমায় যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা রাজ্যটির শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ প্রসঙ্গও টেনে এনে বলেন ‘রাজনৈতিক দলগুলো আগুন নিয়ে খেলছে। তারা জাত-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ কেন? একটি সম্প্রদায়কে হেনস্থা করার জন্য। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’? সেও এক অসত্য এবং বিকৃত কাহিনি।’

কেন বিতর্ক এই ছবি নিয়ে?

আলোচিত-সমালোচিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে নিয়ে কেন বিতর্ক? কী আছে এই ছবিতে? এই ছবির টিজার মুক্তির পর থেকেই দানা বেঁধেছিল বিতর্ক। তারপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিতর্কের আগুন ছড়িয়েছে। এই সিনেমায় কেরালার হিন্দু ও খ্রিস্টান মেয়েদের ছলে-বলে-কৌশলে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএস বা ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ানোর অহরহ ঘটনা উঠে এসেছে। এটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকে।

ছবিতে ধর্মান্তরিত নারীর যে সংখ্যা দাবি করা হয়েছে, যা নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে। কেরালা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারই ভিজয়নও প্রবল আপত্তি তুলেছেন ছবিটি নিয়ে। তিনি বলেছেন, এটা ‘প্রচারণামূলক’ সিনেমা। কোনোভাবেই তার রাজ্যের গল্প নয়।হিন্দু মেয়েদের উপর চলা নির্যাতনের এই কাহিনি ‘ইসলাম বিরোধী’ এবং ‘প্রোপাগান্ডা ছবি’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিবিদদের অনেকে।  

কেরালা হাইকোর্টের কী বলেন?

বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা আর আপত্তি সত্ত্বেও শুক্রবার কেরালা হাইকোর্ট ছবির মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে অস্বীকার করে। আদালত জানান,কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য অবমানাকর কোনওকিছুই ছবির ট্রেলারে উঠে আসেনি। ট্রেলারে আল্লাহই একমাত্র উপাস্য়— এমনটা তুলে ধরা অপরাধ নয়। এই দেশে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ ধর্ম মেনে চলা এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অধিকার রয়েছে। সেটা আপত্তিজনক কেন? আদালত আরও জানান, ‘অসংখ্য় ছবিতে তো হিন্দু সন্ন্যাসীদের ধর্ষক হিসাবে তুলে ধরা হয়। সেখানে তো সমস্যা নেই। হঠাৎ করে এখন এই সিনেমা নিয়ে এত সমস্যা কেন?

Link copied!