এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন কে?
তবে বিসিবি সভাপতি নির্বাচন নিয়ে এখনই আলোচনা হওয়ার কথা ছিল না। কেননা বর্তমান সভাপতির মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু নতুন মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিসভায় ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক মাশরাফি ও সাকিব যে খুব সহজেই বিসিবির হট সিটে বসতে পারছেন না তা এক প্রকার নিশ্চিত।
এর কারণ বিসিবি সভাপতি হতে হলে একজন ব্যক্তি কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। যার কোন ধাপই পার করেননি মাশরাফি কিংবা সাকিব আল হাসান। চলুন দেখে নেয়া যাক বিসিবি সভাপতি নির্বাচনে যে সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
প্রথম দিকে অন্য সকল ফেডারেশনের মতো ফুটবল, ক্রিকেটেও সভাপতি নির্ধারণ করে দিতো বাংলাদেশের সরকার। বাকি পদগুলো ছিল নির্বাচিত। ২০১২ সাল পর্যন্ত ক্রিকেটে সরকার কর্তৃক মনোনীত ছিল বিসিবি সভাপতি পদ। বর্তমানে
বিসিবির সভাপতিকে অন্য পরিচালকদের মতোই প্রথমে পরিচালক হিসেবে আগে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। এরপর পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আসার পর পরিচালকবৃন্দের মধ্যে একজন প্রস্তাব ও আরেকজনের সমর্থনের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ২০১৩, ১৭ ও ২১ তিন মেয়াদেই বিসিবির পরিচালকবৃন্দ পাপনের নামই সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করেন এবং বাকিরা সমর্থন দেয়ায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। একাধিক নাম না আসায় সেখানে আর ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি।
বিসিবির পরিচালক সংখ্যা ২৫। যারা ক্লাব, জেলা-বিভাগ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং সাবেক খেলোয়াড়, সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা থেকে নির্বাচিত হন। প্রিমিয়ার, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাব থেকে সবাই একজন করে কাউন্সিলরশিপ পান এদের মধ্যে থেকে ১২ জন পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন। দশের অধিক প্রার্থী হলে সেখানে এই ক্লাবগুলোর ভোটাররাই ভোট প্রদান করে নির্বাচিত করবেন। ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠক/পৃষ্ঠপোষক/সাবেক ক্রীড়াবিদ মূলত এই ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পরিচালক পদে।
দেশের সাতটি বিভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা পরিচালক নির্বাচন ব্যবস্থা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে দু’টি এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেটে একটি করে পরিচালক পদ রয়েছে। স্ব স্ব বিভাগের পরিচালক প্রার্থীদের ওই বিভাগের ভোটাররাই শুধু ভোট প্রদান করবেন। প্রতিটি বিভাগে ভোট প্রদান করেন তাদের অর্ন্তগত জেলা ক্রীড়া সংস্থার মনোনীত কাউন্সিলররা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর সাধারণত সেই জেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা যে কেউ হতে পারেন, আবার এর বাইরেও হতে পারেন।
আরেকটি ক্যাটাগরিতে মাত্র একটি পরিচালক পদ। সাবেক খেলোয়াড়, বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থা থেকে একজন পরিচালক হতে পারেন। গত নির্বাচনে এই ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পরবর্তীতে সুজন ওই পদে নির্বাচিত হন। তিন মেয়াদেই একই পদে নির্বাচন করছেন সুজন।
এই তিন ক্যাটাগরির বাইরে রয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটার পরিচালক। বর্তমান বোর্ডে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কোটায় পরিচালক। এই কোটায় কোনো নির্বাচন হয় না। এনএসসি যাদের মনোনয়ন দেবেন, সরাসরি নির্বাচিত হবেন তারা। এই কোটার আরও স্বাধীনতা রয়েছে- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে ক্লাব, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে দু’জনকে এনএসসি কোটায় পরিচালক মনোনীত করতে পারে।
সাকিব-মাশরাফি কেন পারছেন না?
বিসিবি সভাপতি হতে চাইলে এই পঁচিশ পদের যেকোনো একটিতে দেশের এই দুই ক্রিকেটারের নাম থাকতে হবে। নিজের জেলা বা ক্লাবের সঙ্গে এখনো যুক্ত হতে পারেননি সাকিব আল হাসান বা মাশরাফি বিন মর্তুজা। বিশেষ করে, দুজনেই এখনো ক্লাব পর্যায়ে খেলে থাকেন, তাই চাইলেই তাদের পরিচালক পদে আসা সম্ভব না।
অন্যদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নেওয়ার কারণে সাবেক ক্রিকেটার হিসেবেও তাদের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব না।