আফিফ-মিরাজের ব্যাটে টাইগারদের আফগান জয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৬:৫৭ পিএম

আফিফ-মিরাজের ব্যাটে টাইগারদের আফগান জয়

ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিরিয়েছেন দলকে, গড়েছেন রেকর্ড জুটি। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের আগের রেকর্ড (১২৭) টপকে নতুন রেকর্ড (১৭৪) গড়লেন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের ব্যাটে চেপে জয়ের হাসি হাসল টাইগাররা। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের দেওয়া ২১৬ রানের টার্গেট টপকে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে এসে আলোচিত হয়েছিলেন মিরাজ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান তিনি। সেই চট্টগ্রামেই আবার আলোচনায় মিরাজ। আফিফের সঙ্গে রেকর্ড জুটি বেঁধে বাংলাদেশকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়। আফিফ-মিরাজের যুগলবন্দীতে শুরুতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ আফগানদের বিপক্ষে অসাধারণ জয় তুলে নিল।

তবে এর আগের গল্পটা ছিল ভয়ঙ্কর। রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাটিংয়ে আসেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দারুণ শুরুর ইঙ্গিন দেন তামিম। কিন্তু এরপরই হঠাৎ এক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশের ব্যাটিং। সেই ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন বিপিএলে ঢাকার হয়ে খেলা ফজলে হক ফারুকী। ইনিংসের তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারেই এই পেসার জোড়া শিকারে ফেরান লিটন আর তামিমকে। ফারুকীর মিডল স্টাম্পে থাকা বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন লিটন। ঠিক মতো পারেননি। ব‍্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। লিটন ফেরেন ৮ বলে ১ রানে। 

এক বল পর পা বাড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। ব‍্যাটে-বলে করতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। লিটনের পর তামিমের বিপক্ষে রিভিউ নিয়েও সফল আফগানরা। দুই চারে ৮ বলে ৮ রান করে বিদায় নেন তামিম। চারে আসা মুশফিকুর রহিমকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান ফারুকী। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আবার জোড়া আঘাত ফারুকীর। এবার তার গতির কাছে পরাস্ত মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত ইয়াসির আলি রাব্বি।

আফগান বোলার ফজলে হক ফারুকী

বাঁহাতি পেসারের মিডল স্টাম্পে পড়ে প্রায় সোজা যাওয়া বলের লাইনে যেতে পারেননি মুশফিক। আরেকটু বেশি সুইং আশা করা ‘মিস্টার ডিপেন্ডডেবল’ এলবিডব্লিউ হওয়ার পর নেন রিভিউ। কাজ হয়নি, রিপ্লেতে দেখা গেছে বল লাগতো অফ-মিডল স্টাম্পে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে ফারুকীর বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে শূন‍্য রানে সাজঘরে ফেরেন রাব্বি। ১৮ রানে নেই বাংলাদেশের ৪ উইকেট।

অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে সাকিব আল হাসানকে ফেরান তার বিপিএল সতীর্থ মুজিব উর রহমান। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্পে আঘাত হানলে সাকিব আউট হন ১৫ বলে ১০ রানে। সতীর্থের পথে পা বাড়িয়ে সাজঘরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। রশিদ খানের শর্ট বল জায়গায় দাঁড়িয়ে কাট করার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ। ঠিক মতো পারেননি তিনি। ক‍্যাচ যায় স্লিপে। এক চারে ১৭ বলে ৮ রান করেন অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব‍্যাটসম‍্যান। মাত্র ৪৫ রানে প্রথম সারির ৬ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদ বাড়ে।

যখন নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন (৫৮) রানের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, তখন থেকেই গল্পটা নিজেদের করে নেন মিরাজ আর আফিফ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে ভেড়ান জয়ের নোঙরে। সেই ভীষণ চাপের সময় নেমে দুই তরুণ খেলছেন ক‍্যারিয়ার সেরা ইনিংস। দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর পথে গড়েছেন সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি। ২০১৮ সালে মিরপুরে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ইমরুল কায়েসের ১২৭ ছিল সপ্তম উইকেটে আগের রেকর্ড জুটি।

দুজনের অবিচ্ছেদ্য ১৭৪ রানের জুটিতে ৪ উইকেট আর ৭ বল হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতকের স্বাদ পেয়েছেন আফিফ হোসেন। মিরাজ তুলে নিয়েছেন দ্বিতীয় অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ১১৫ বলে ১১ চার ও ১ ছয়ে আফিফ অপরাজিত থাকেন ৯৩ রানে। ৯টি চারের সাহায্যে ১২০ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ। এই জয়ের ফলে আইসিসি সুপার লিগে আরো ১০টি পয়েন্ট যোগ হলো অধিনায়ক তামিমের দলের পাশে।

দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ ও আফিফ

এর আগে, বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের দূর্দান্ত সূচনায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। মাঝে প্রতিরোধ গড়েছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান-মোহাম্মদ নবী। দুজনে পঞ্চম উইকেটের জুটিতে সর্বোচ্চ ৬৩ রান যোগ করেন। নবী ফিরলেও নাজিবুল্লাহ ছিলেন অবিচল। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬৭ রান। এক প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও নাজিবুল্লাহ জাদরান ছিলেন অবিচল। দারুণ ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন ইনিংস গড়ায়। ৭০ বলে দেখা পেয়েছিলেন হাফসেঞ্চুরির। ৪৯তম ওভারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন লং অনে। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬৭ রান। ৮৪ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে এই রান করেন তিনি।৩৪ রান করেন রহমত শাহ। এ ছাড়া ত্রিশের ঘর পেরোতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। 

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান। ১টি উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ।

 

 

আরও পড়তে পারেন-

সাভারে করোনার টিকা নিতে আসাদের ভিড়

ইউক্রেনে কেমন রয়েছে বাংলাদেশীরা

৩০ দিনের জরুরী অবস্থা ইউক্রেনে

 

Link copied!