তানজীম হাসান সাকিবের করা ৪৭তম ওভারের শেষ বল। স্ট্রাইকিং প্রান্তে নুরুল হাসান সোহান। ওয়াইড লং অফে দারুণ চারে পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির বাইরে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূন্যে ছুঁড়তে থাকেন সোহান। ডাগআউট থেকে সতীর্থরা তখন এক দৌড়ে মাঠে। হবেই না বা কেন, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে এই প্রথমবার যে চ্যাম্পিয়ন হয়ছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। তাও আবার ঢাকা লিগে রাজত্ব করা ঐতিহ্যবাহী আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নেয় আবাহনী। শেখ জামালের বোলারদের নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে ২২৯ রানের বেশি করতে পারেনি মোসাদ্দেক হোসেনের দল। রান তাড়া করতে নেমে ৪৭ ওভারে ৪ উইকেট হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শেখ জামাল।
১৪ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শেখ জামাল। দ্বিতীয় অবস্থানে লিজেন্ড অব রূপগঞ্জের পয়েন্ট ২০। শেষ ম্যাচ জামালের সঙ্গে রূপগঞ্জ জিতলেও তাদের পয়েন্ট হবে ২২। তাই ১ ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হল ধানমন্ডির ক্লাবটি।
সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিপদের মুহূর্তে দলের কান্ডারি হয়ে দাঁড়িয়ে যান। ১৮.৪ ওভারে ৭২ রানে ৩ উইকেট পড়লে ক্রিজে আসেন তিনি। এরপর মাঠ ছাড়েন দলকে জিতিয়ে অপরাজিত থেকে।
সোহান মাঠে আসার পর ইমরুল কায়েস (১৫) ও রবিউল ইসলাম (৩) ফেরেন। ৭৮ রানে নাই হয়ে যায় পাঁচটি উইকেট। আগের ৫ ব্যাটসম্যান কেউ ২০ রানের ঘর পেরোতে পারেননি। পারভেজ রসুলকে নিয়ে শুরু হয় সোহানের লড়াই। দুজনে থিতু হয়ে উলটো আবাহনীর উপর চাপ বাড়িয়ে দেন।
দুজনের জুটি থেকে আসে ৭২ রান। নাজমুল হোসেন শান্তর বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন রসুল। তিনি ৪০ বলে ৩৩ রান করেন। কিন্তু সোহানকে টলানোর মতো যেন কোনো বোলার ছিল না আবাহনীতে। এক প্রান্ত আগলে রাখেন। দৃষ্টি নন্দন চার-ছয়ে মাতিয়ে রাখেন শের-ই-বাংলা। ৬১ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে দেখা পান ফিফটির। রসুল ফিরলে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে শুরু হয় সোহানের যুদ্ধ। দুজনের ৮২ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে তবে মাঠ ছাড়েন। ৮ চার ও ২ ছয়ে সোহান ৮১ বলে ৮১ রান করে অপরাজিত ছিলেন। আর ৪ চার ও ২ ছয়ে জিয়া খেলেন ২৬ বলে ৩৯ রানের দারুণ ক্যামিও ইনিংস।
সাইফউদ্দিন-তাঞ্জীম সাকিবরা শুরুতে চাপ সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত পারেননি সোহানের কাছে। সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন সাইফ উদ্দিন। এ ছড়া ১টি করে উইকেট নেন তানভীর ইসলাম, সাকিব, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নাজমুল হোসেন শান্ত। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তানভীর, শেষ পর্যন্ত তিনি থাকতে পারেননি। মাঠ ছেড়ে উটে যান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৫ রান করতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে আবাহনী। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ১৬ রান করে ফেরেন পারভেজ রসুলের শিকার হয়ে। লিটন দাস (৪) ও নাজমুল হোসেন (৮) দলের হাল ধরতে পারেননি। এরপর প্রতিরোধ গড়েন তৌহিদ হৃদয়-আফিফ হোসেন ধ্রুব।
দুজনে অর্ধশতাধিক রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের আশা দেখাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই সাইফ হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন আফিফ। ৪৪ বলে ২৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। মোসাদ্দেক হোসেন থিতু হয়েও ফেরেন ১৫ রান করে। হৃদয় তুলে নেন ফিফটি। ৬৯ বলে ৪টি চারে ফিফটি করেন এই ডানহাতি। এরপর মাত্র ৩ রান যোগ করে ফেরেন হৃদয়।
১৫৪ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আবাহনীকে রক্ষা করেন সাইফউদ্দিন-জাকের আলী অনিক। দুজনে ৭৫ রানের জুটি গড়ে মাঠ ছাড়েন অপরাজিত থেকে। জাকের ধরে খেললেও সাইফ খেলেছেন হাত খুলে। ৭০ বলে ৪৭ রান আসে অনিকের ব্যাট থেকে। আর ৫টি ছয়ে ৩৩ বলে ৪৪ রান করেন সাইফ।
জামালের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন জিয়াউর রহমান। এ ছাড়া ১টি করে উইকেট নেন পারভেজ রসুল, সাইফ হাসান, সুমন খান ও সানজামুল ইসলাম।