শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনি: আইন উপদেষ্টা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম

শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনি: আইন উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো গাফিলতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, যে প্রক্রিয়ায় বিচার এগোচ্ছে, তাতে এই সরকারের সময়েই শহীদ পরিবার বিচার পাবে। দায়িত্বে সরকার বিন্দুমাত্র গাফিলতি করছে না।

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখার জন্য বিচারে সময় লাগছে বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিচার পাওয়ার সময়সীমা বলে দিলে সবাই খুশি হয়। কিন্তু এ ধরনের ঘোষণা প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দেয়।

জুলাইয়ে গণহত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোনো অনুশোচনা নেই বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তারা এখনো মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। মহাখুনী শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, এখনো তাঁর নির্যাতন করার ইচ্ছা, প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, আমি সরি, আমার মনে হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এত জঘন্য অপরাধ করেনি। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা। আন আর্মড (নিরস্ত্র) মানুষ আহত হয়ে যাচ্ছে যখন, তখন গুলি করে মেরে ফেলা। আপনারা বলতে পারেন, ২৫ মার্চে কালরাতে হয়েছে। অবশ্যই ২৫ মার্চে কালরাতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একদম ওটা তো অন্য দেশের বাহিনী। আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা করেছি তারপর।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘৭১ সালে ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেছে এমন ফুটেজ আমি দেখি নাই। বা ৭১ সালে একজন গুলি খেয়েছে, তাকে ধরে পিছু নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সেই অবস্থায় তাকে গুলি করেছে, এ রকম কোনো ফুটেজ বা এ রকম কোনো বর্ণনা আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনায় পড়িনি। অন্য রকম নৃশংসতা থাকতে পারে, কিন্তু এ রকম নৃশংসতা পড়িনি।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, তারা তদন্তের অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণ এমনভাবে রেখে যাবেন, যেন পরবর্তী কোনো সরকার চাইলেও বিচার থেকে সরে যেতে না পারে। বিচারের ভিত্তি মজবুত হলে তা অস্বীকার করা পরবর্তী কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।

অনুষ্ঠানে জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পরিচালনার দায়িত্বে পুলিশ বাহিনীর থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, সিস্টেমকে রান করার জন্য পুলিশের প্রয়োজন। তবে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা অত্যাচারের ‘আইকনিক ফিগার’ ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের। অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত মানুষের জন্য দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ‘ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ইয়ামিনের বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, শহীদ মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

Link copied!