বিপিএলের অভিষেক ম্যাচেই মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২৯, ২০২২, ১১:১১ পিএম

বিপিএলের অভিষেক ম্যাচেই মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিক

 

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নিজের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। এটি বিপিএলের ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক। এর আগে বিপিএলের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক আছে আলিস আল ইসলামের। 

ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে চট্টগ্রাম ২০২ রান করে। জবাবে ৬ উইকেটে ১৮৬ রানে থেমে যায় সিলেট। চট্রগ্রাম ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে। 

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ইনিংসের ১৮তম ওভারে এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও রবি বোপারাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেন মৃত্যুঞ্জয়। প্রথম দুই বলে ছয় ও চার হাঁকিয়েছিলেন বিজয়।

তৃতীয় বলে এক্সট্রা কাভারে নাসুমের হাতে ধরা পড়েন বিজয়। পরের বলে মোসাদ্দেক ক্যাচ দেন আফিফের হাতে আর রবি বোপারা আউট হন বোল্ড হয়ে। 

মৃত্যুঞ্জয় তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলে হ্যাটট্রিক করলেন। এর আগে আল-আমীন ২০১৫ সালে ও আলিস ২০১৯ সালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। বিদেশি তিন জনের মধ্যে মোহাম্মদ সামি ২০১২ সালে, ওয়াহাব রিয়াজ ও আন্দ্রে রাসেল করেন ২০১৯ সালে।

আগের ৪ ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি, সাইড বেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন সময়। আজ (শনিবার) দলে অদলবদল হওয়ায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর। তাকে নিয়ে কেন এতো আলোচনা, সেটিই যেন বুঝিয়ে দিলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। দীর্ঘ ইনজুরি থেকে ফিরে সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে আলো ছড়িয়েছেন বল হাতে। আজ তো বিপিএল খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করে বসলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এই পেসার।

এবারের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু থেকে রান খরায় ভুগছে। ঢাকা পর্বে রাতের কয়েকটি ম্যাচে রান দেখা গেছে। তবে বিপিএল যেন তার প্রাণ ফিরে পায় চট্টগ্রাম পর্বে। আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা গেল এবারের আসরে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রাম আগে ব্যাট করে সংগ্রহ করে ২০২ রান। তবুও সুবিধা করতে পারছিল না দলটি। তবে শেষদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকে সিলেটকে ১৮৬ রানে থামিয়ে শেষ হাসি স্বাগতিক শিবিরের। ১৬ রানে ম্যাচ জিতে জয়ের ধারায় ফিরল স্বাগতিক চট্টগ্রাম। 

৫ ম্যাচে এটি তাদের তৃতীয় জয়। অন্যদিকে ৪ ম্যাচে সিলেটের তৃতীয় হার এটি। ২০৩ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সিলেট। আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান লেন্ডন সিমন্স ঝড়ো শুরুর আভাস দিয়ে আউট হন ৯ রান করে। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভার করতে এসে সফল নাসুম আহমেদ। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাড়ায় সিলেট। এনামুল হক বিজয় আর কলিং ইনগ্রাম আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে গড়েন ১১৩ রানের পার্টনারশিপ। এতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে সিলেট। দুজনের জুটির মাঝে দুই ব্যাটসম্যানই তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি।

তবে ফিফটি করে পথ হারান ইনগ্রাম। নিজের খেলা পরের বলেই ধরলেন প্যাভিলিয়নের পথ। মিরাজের বলে বোল্ড হন ৩৭ বলে ৫০ রান করে। যেখানে ৫টি চারের সঙ্গে ছক্কা মারেন ২টি। ব্যাটিং অর্ডারে এগিয়ে এসে সুবিধা করতে পারেননি আলাউদ্দিন বাবু। ১ রান করে নাসুমের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। এরপর রবি বোপারা এসে বিজয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে আবার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। তবে দুজনের ৪২ রানের পার্টনারশিপের পর বিজয় আউট হলে চূর্ণ হয় সেই স্বপ্ন।

ব্যাট হাতে শুরু থেকেই আগ্রাসী বিজয় ৪৭ বলে ৭৮ রান করে আউট হন। যেখানে ৫টি চারের সঙ্গে ছক্কা মারেন ২টি। বিজয়কে ফের আনো মৃত্যুঞ্জয় এরপর পুরো আলো কেড়ে নেয় নিকের দিকে। পরের দুই বলে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন (০) ও রবি বোপারাকে। ইংলিশ ব্যাটসম্যান বোপারা ১২ বলে ১৬ রান করে বোল্ড হলে হ্যাটট্রিকের উল্লাসে মাতেন মৃত্যুঞ্জয়। এবারের আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক এটি। সব মিলিয়ে পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন তিনি।

এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সিলেট। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে তাদের ইনিংস ১৮৬ রানে। এতে ১৬ রানের জয় পায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রামকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ওপেনার উইল জ্যাকস। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন ইংল্যান্ডের ২৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কেনার লুইসকে একপাশে রেখে মাত্র ১৮ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়ে গড়েন বিপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড, যা এবারের আসরে দ্রুততম। যদিও ইনিংসটিকে আর টানতে পারেননি জ্যাকস। তাসকিন আহমেদের বলে আউট হন ১৯ বলে ৫২ রান করে। যেখানে হাঁকান ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা। 

জ্যাকস যখন আউটন হন, তখন ৪ ওভার ৪ বলে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ৬২ রান। এর খানিক পর লুইসও বিদায় নেন। ১২ বলে ৮ রান করা এই ক্যারিবীয়কে ফেরান সোজাগ গাজী। মাঝে চট্টগ্রামের রান তোলার গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। তৃতীয় উইকেটে আফিফ হোসেন আর সাব্বির রহমান ৪৭ রানের জুটি গড়তে খেলেন ৪৫ বল। সাব্বির ২৯ বলে ৩১ আন করে সাজঘরে ফিরপে ভাঙ্গে এই জুটি 

পরে আফিফ ১টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ২৮ বলে ৩৮ রান করে প্যাভিলিয়ন ফিরলে চট্টগ্রামের নতুন অধিনায়ক নাঈম ইসলামও দ্রুত বিদায় নেন। ৭ বলে ৮ রান করে মুক্তার আলির বলে আউট হন তিনি। এর পরের গল্পটা বেনি হাওয়েল আর অধিনায়কত্ব হারানো মেহেদী হাদান মিরাজের। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ২টি চার ও ৩ ছয়ের সাহায্যে মাত্র ২১ বলে ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন হাওয়েল। সঙ্গে ৪ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।

শেষে দুজনের ১০ বলে ৩১ রানের অবিচ্ছেদ্য পার্টনারশিপে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রামের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০২ রান। সিলেটের হয়ে সবচেয়ে খরুচে তাসকিন ৪ ওভারে দেন ৫৩ রান।

বিপিএলে যত হ্যাটট্রিক

বোলার                        দল          তারিখ

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী         চট্টগ্রাম        ২৯ জানুয়ারি ২০২২

আন্দ্রে রাসেল           ঢাকা           ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

ওয়াহাব রিয়াজ          কুমিল্লা         ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

আলিস ইসলাম          ঢাকা           ১১ জানুয়ারি ২০১৯

আল-আমিন হোসেন    বরিশাল       ২৪ নভেম্বর ২০১৫

মোহাম্মদ সামি            রাজশাহী     ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২

Link copied!