এআই: চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৫, ২০২৩, ০৩:৫৯ এএম

এআই: চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বনাম চাকরির নিশ্চয়তা নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। কোথাও বলা হচ্ছে, ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির জায়গা নেবে এআই। কেউবা বলছে, ৫ বছরে বিশ্বে দেড়কোটি কর্মসংস্থান হারাবে মানুষ। 

চ্যাটজিপিটি নিয়ে মানুষ যতটা সুখকর অনুভূত হচ্ছে, সেই সুখ যেনও অমাবস্যায় রূপ নিচ্ছে। যেমনটি বলা হয়েছিল বিজ্ঞানের আবিষ্কার যেনও বিজ্ঞানকে ধ্বংস করছে।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বা ডব্লিউইএফের রিপোর্ট প্রকাশের পর এই সকল কথার শুরু হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির চাপে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে চাকরির বাজার। ২০২৭ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৯০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর একই সময়ে ৮ কোটি ৩০ লাখ কাজ বিলুপ্ত হবে। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ কাজ হ্রাস পাবে। কাজ হারাবে বিশ্বের সামগ্রিক কর্মশক্তির ২ শতাংশ।

আর অন্যদিকে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশের ক্ষেত্রে গডফাদার হিসেবে অভিহিত ড. জফ্রি হিন্টন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, আর কিছুকাল পরই ডিজিটাল কথপোকথনের জন্য ব্যবহৃত চ্যাটবটগুলো মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে, যা ভয়াবহ বিপদের কারণ হবে। 

মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে দেওয়া এক বিবৃতিতে ৭৫ বছর বয়স্ক ব্রিটিশ-ক্যনাডিয়ান এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী গুগল থেকে তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন। সাথে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যেসব উন্নতি হচ্ছে তার বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য তিনি অনুতাপ বোধ করেন।

সোমবার একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘গুগলের সমালোচনা নয়, বরং এআই-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলার জন্যই আমি চাকরি ছেড়েছি। আমি গুগলের চাকরি ছেড়েছি যাতে শুধু গুগল নয়, অন্য সকল প্রযুক্তিক্ষেত্রে এআই কিভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তা ব্যাখ্যা করতে পারি।’

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উন্নয়ন ঘটছে, তাতে কর্মক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলছে। একই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী সঙ্কোচন হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। 

তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুল ব্যবহারের ভাল দিক যেমন আছে, তেমনই রয়েছে নেতিবাচক কিছু বিষয়। তার মধ্যে অন্যতম হল কর্মী সংকোচন। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের জন্য সংস্থাগুলি যেমন কিছু কর্মী নিয়োগ করবে, তেমনই এর ব্যবহারের ফলে পুরনো অনেক কর্মীর আর প্রয়োজন বোধ করবে না সংস্থাগুলো। সেখান থেকেই আসতে পারে কর্মী সঙ্কোচন।

মূলত ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল প্রথম শিল্পবিপ্লব, যা মানুষকে আধুনিক শিল্পায়নের দিকে ধাবিত করে। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব অর্থাৎ ১৮৭০ সালের শুরু হয় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গণ-উৎপাদন। উদ্ভব ঘটে প্রোডাকশন লাইন ধারণার। এতে উৎপাদন বাড়ে বহুগুণ। ইলেকট্রনিকস্ আর তথ্যপ্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ট্রানজিস্টর অবিষ্কারের পর শুরু হয় তৃতীয় শিল্পবিপ্লব।

কম্পিউটারের ব্যবহার ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিসহ আবিস্কৃত ইন্টারনেট বিশ্বকে এনে দেয় মানুষের হাতের মুঠোয়। উদ্ভব ঘটে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার (পিএসসি) ব্যবস্থার। আর তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের উপর ভর করেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। এ হচ্ছে প্রযুক্তির এক ধরনের মিথস্ক্রিয়া। 

শক্তি সঞ্চয় কিংবা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বায়োটেকনোলজির সাথে অটোমেশন প্রযুক্তির মিশ্রণে শুরু হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।

Link copied!