ফেসবুক নিজেই ছড়ায় ভুল তথ্য ধর্মীয় বিদ্বেষ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৫, ২০২১, ১০:৫৭ এএম

ফেসবুক নিজেই ছড়ায় ভুল তথ্য ধর্মীয় বিদ্বেষ!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকের একটি বড় অংশের বিষয়বস্তু (কনটেন্টে) ভুল তথ্য পরিবেশন, ঘৃণা ছড়ানো ও উস্কানিমূলক বক্তব্যে ভরা। এসব কারণে ফেসবুকের বৃহত্তম বাজার হিসেবে পরিচিত ভারতে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই এসব নিয়ন্ত্রণে রীতিমত লড়াই শুরু করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের মহামারি চলাকালে ভুল তথ্য জানানো হয়েছিল।  দেশটির ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে সংযুক্ত বট ও ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জাতীয়  নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের নামে এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে মুসলিমবিরোধী পোস্ট ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

নিউইয়ের্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে- ফেসবুক নিয়ে গবেষণাকারী এক ব্যক্তি ভারতের কেরালা রাজ্যের একজন ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা প্রমাণের জন্য একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। পরে ওই অ্যাকাউন্টটিকে ফেসবুকের পদ্ধতি বা প্রসেসে তৈরি সব সুপারিশকে অনুসরণ করার নির্দেশনা দেন।

পরবর্তীতে একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে ওই ফেসবুক গবেষক লিখেছেন, ‘ আমার সারা জীবনে আমি যতগুলো মৃত মানুষের ছবি আমি দেখেছি, গত তিন সপ্তাহে ওই পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর নিউজ ফিড অনুসরণ করে তার চেয়ে বেশি মৃত মানুষের ছবি আমার চোখে পড়েছে।’

একটি নথিতে দেখা গেছে, বিশ্বে দৈনিক সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১০ ভাগই  উত্তর আমেরিকার। তবে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম এই মাধ্যমটি বৈশ্বিক বাজেটের ৮৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভুল তথ্য নিরসণের  জন্য  সংরক্ষিত করে রেখেছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের পর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুক দেখেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ৪০ ভাগের বেশি ছাপ “ভুয়া বা অসত্য”।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফেসবুকের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জ্ঞান লাভের আগেই দেশে প্রবেশ করার জন্য কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ভারতের মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। দেশটিতে সরকারিভাবে স্বীকৃত ২২টি ভাষায় দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে কোম্পানিটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং অন্যান্য আউটলেটগুলোকে দেয়া নথি থেকে জানা যায়, ফেসবুক ভারতে গুরুতর ভুল তথ্য এবং সহিংসতাকে উৎসাহিত করেছে৷  জনবহুল দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তারা পর্যাপ্ত পদক্ষেপের সাথে সাড়া দেয়নি।

২০২১ সালের শুরুর দিকে একটি কেস স্টাডির বর্ণনা দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে বাংলা এবং হিন্দিতে লেখা বিষয়বস্তু খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবের কারণে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং বজরং দলের মতো গোষ্ঠীগুলোর ক্ষতিকারক সামগ্রীর বেশিরভাগই ফেসবুক বা হোয়াটাসঅ্যাপ-এ পতাকাঙ্কিত করা হয়নি।

ওই সময় ফেসবুক ‘রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা’ এর কারণে আরএসএসকে অপসারণের জন্য চিহ্নিত করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বজরং দলের (প্রধানমন্ত্রী মোদির দলের সাথে যুক্ত) বিরুদ্ধে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ আহ্বান সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ, ফ্যাক্ট-চেকিং থেকে মুক্ত রাজনীতিকদের জন্য কোম্পানির একটি সাদা তালিকা ছিল।

ফেসবুকের হুইসেল ব্লোয়ার ফ্রান্সেস হাউজেনের ফাঁস করা তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, ফেসবুক সম্প্রতি পাঁচ মাস আগে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সংগ্রাম করছিল। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগের পরীক্ষার মতো, গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, ফেসবুকের সুপারিশ ইঞ্জিন কত দ্রুত বিষাক্ত সামগ্রীর পরামর্শ দিয়েছে। তিন সপ্তাহের জন্য ফেসবুকের সুপারিশ অনুসরণ করে একটি ডামি অ্যাকাউন্ট বিভক্ত জাতীয়তাবাদ, ভুল তথ্য এবং সহিংসতার ‘ধ্রুবক’ অত্যান্ত বেশি ছিল।

ফেসবুক বলেছে যে, ফাঁসগুলো সম্পূর্ণ তথ্য দেয় না। ফেসবুক মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ডেটা অসম্পূর্ণ ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট চেকারগুলোর জন্য কোন অ্যাকাউন্ট নেই। তিনি আরও বলেন, ফেসবুক বাংলা ও হিন্দির মতো ভাষায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং কোম্পানি সেই প্রযুক্তির উন্নতি অব্যাহত রেখেছে।

ফেসবুকের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। দেশটিতে ৩৪ কোটিরও বেশি মানুষ তার পরিষেবা ব্যবহার করে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে ভুল তথ্য নিরসনে ফেসবুকের বাজেটের ৮৭ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নিবদ্ধ থাকে। তাই ভারত আনুপাতিক পরিমাণে মনোযোগ পাচ্ছে না। তাই ভারতের ফেসবুকের ভুল তথ্য নিরসণ এবং সহিংসতার সমস্যাগুলো কবে নাগাদ সমাধান হবে-এটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এনগ্যাজেট 

Link copied!