রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোতে যোগ দেবে না জানিয়েছে ইউক্রেন। তবে এর বিনিময় মস্কোকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে। মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রুশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শান্তি শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনিয় প্রতিনিধি দল এ তথ্য জানিয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের উদ্যোগে মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ওই শান্তি আলোচনা শুরু হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই দেশের এটি প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।
ইউক্রেনিয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনায় বক্তব্য দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান।
এ সময় তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তার গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। এরদোয়ান বলেন, এই আলোচনার অগ্রগতি দুই নেতার সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি করবে। আর সেই আলোচনা আয়োজনের জন্য তুরস্কও প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পঞ্চম সপ্তাহে গড়ায় গভীর দুঃখপ্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এই সংঘাত বন্ধ করা উভয়পক্ষেরই দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইউক্রেনে হামলার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রধান অজুহাত ছিলো কিয়েভের ন্যাটোতে যোগদানের উদ্যোগ। রাশিয়ার দাবি ছিল, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে। অর্থাৎ শুধু ন্যাটো নয়, কোনো ধরনের সামরিক জোটেই যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন।
আলোচনায় রাশিয়ার অধিগ্রহণ করা ক্রিমিয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ক্রিমিয়ার মর্যাদা কী হবে সে বিষয়ে ১৫ বছর মেয়াদে আলোচনার একটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে ইউক্রেন বলেছে, শুধুমাত্র সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির কার্যকর হলে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রসঙ্গত, উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করা নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় মস্কো-কিয়েভের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো। তবে ওই কৌশল কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এর দুদিন পর ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ। যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা এবং রাশিয়ার ১৬ হাজার ৪০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন সরকার। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের ১ হাজার ৩৫১ সেনা নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।