বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগের তথ্য জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৯:২২ পিএম

বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগের তথ্য জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপি ও জামায়াতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ-সংক্রান্ত তথ্য সংসদকে অবহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ লবিস্ট নিয়োগে কত টাকা ব্যয় করেছে সেই তথ্যও তিনি জানিয়েছেন। বুধবার সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে এ তথ্য জানান তিনি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লবিস্ট  নিয়োগ নিয়ে গত রবিবার জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক। এর প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা সে দেশের আইনে একটি বৈধ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “ভারত, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী সেটা হলো মুখ্য।”

মন্ত্রী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এ জন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার (প্রতি বছর প্রতিমাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার) ব্যয় করেছে। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিটচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।”

মন্ত্রী বলেন, “দুঃখের বিষয় হচ্ছে লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। লবিস্ট চিঠি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে সহায্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয় তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলছে।”

তিনি বলেন, “মাঠে ময়দানে যারা বিএনপির কর্মী আছেন, তারা কেউ চাইবেন না দেশে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাক। তাদের কিছু নেতৃস্থানীয় মানুষ তাদের অগোচরে এমন কাজ করেছেন। বিএনপি সংসদ সদস্যরাও নিশ্চয় চান না, দেশ রসাতলে যাক। তাদের নেতারা কীভাবে এভাবে লিখতে পারেন।”

সরকারের লবিস্ট নিয়োগ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,  “সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেনি। পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লবি করে তদবির করে, সরকার সে ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি। সরকার যেটা করেছে, অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য-যেগুলো ছড়ানো হয় তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানোর জন্য। বিজিআর নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধে বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে যাতে লিখতে পারে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বন্ধের জন্য বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের জন্য, অপপ্রচারের বদলে সত্য কথা বলার জন্য বাংলাদেশ সরকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা নেবে। তার একটি নমুনা হচ্ছে বিজিআর। তারা অসত্য তথ্য দিচ্ছে। তখন বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।”

ড. মোমেন বলেন, “বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের প্রতি ধিক্কার। বিএনপি যে এতগুলো ফার্মে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে এত টাকা ব্যয় করলো, তারা কি তাদের দলের আয় ব্যয়ের হিসাবে দেখিয়েছে? তারা কি তাদের সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজগুলো করেছে?”

Link copied!