প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি) সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে বিদায় অনুষ্ঠান করবেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইসি সচিবালয় ত্যাগ করবেন তারা।
গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে নির্বাচন কমিশনের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিরপেক্ষ ও সফলতার সঙ্গে পুরো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের "বীর মুক্তিযোদ্ধা" খচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (বাংলা পাঠ) এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, আইন, ২০২১ এর মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে ইসি ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা জানান, আইনের মধ্যে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। কমিশনের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে নিজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে কমিশন। কারও কথায় নয়, আইনের শাসনের মধ্যে থাকার চেষ্টা ছিল তাদের। আর একটা পদের জন্য নির্বাচন করেন সাতজন, পাস করেন একজন। তাই সমালোচনা তো হবেই। বলেন, কমিশন সাফল্যের সঙ্গেই কাজ করেছে। সব কটি নির্বাচন শেষ করতে পেরেছে। একটা নির্বাচনও বাকি নেই।
সিইসি বলেন,“কোনো রকমের কারও কথায় না, আইনের শাসনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি। সমালোচনা হবে, ভালোমন্দ বলবে। এটা স্বভাবিক, এদেশের কালচার অনুযায়ী স্বাভাবিক।”
কে এম নূরুল হুদা বলেন, “সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে তা নয়। মারামারি হয়েছে, কোথাও ব্যালট ছিনতাই হয়েছে আবার ধরা পড়েছে। নির্বাচন বন্ধ হয়েছে। আবার পুনরায় নির্বাচন হয়েছে। সুতরাং, সবগুলো নির্বাচন পরিপূর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে তা বলা যাবে না।”
তিনি বলেন, “শীতের দিনে রোদের মধ্যে নারী পুরুষ লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছে, ৭০ শতাংশ ভোট দিচ্ছে, ইভিএমে ৭০ শতাংশ ভোট দিচ্ছে। এর চেয়ে সফল নির্বাচন আর কী হতে পারে?”
ইসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের মধ্যে কে এম নূরুল হুদাকে সিইসি করে পাঁচ সদস্যের কমিশন নিয়োগ দেন। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন-মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন তারা। নিয়োগ পাওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
কে এম নুরুল হুদা কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করা। এ লক্ষ্যে তিনি নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নারী নেত্রী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রায় তিন মাসব্যাপী সংলাপের আয়োজন করেন। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে বিএনপি সরকার দেশে প্রকৃত নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে। ’
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা সিইসিকে সতর্ক হয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিন মাসের ওই সংলাপে কারো কোনো সুপারিশ নিয়ে কমিশন সভায় কোনো আলোচনা হয়নি এবং তা পর্যালোচনা করে গ্রহণযোগ্য সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার অভিযোগ আনেন। দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পরই অন্য নির্বাচন কমিশনারদের না জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের গণবদলির বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা হয়।
নুরুল হুদা কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে পেরেছে দাবি করলেও ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ওই নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যালোচনাবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, “সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ বলা গেলেও ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ বলা যায় না। ”
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের মধ্যে কে এম নূরুল হুদাকে সিইসি করে পাঁচ সদস্যের কমিশন নিয়োগ দেন। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন-মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন তারা। নিয়োগ পাওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। গত পাঁচ বছরে ইসি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ প্রায় পাঁচ হাজার নির্বাচন আয়োজন করেছে।