বাসগুলো পদ্মা সেতু পারাপারেই জনপ্রতি ২০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে! মোটরসাইকেলেও যাত্রী পারাপার করছে বাইকাররা। তারাও ২০০ থেকে চারশ টাকা নিয়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া সেতুর ওপর দাঁড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও লোকজন প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর মাঝখানে গিয়ে থামছে এবং কেউ কেউ সেলফি ও ছবি তোলার কাজ করছে। সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের রুট পারমিটও দেখা হচ্ছে না।
রবিবার সেতুতে প্রথম দিনের মতো যান চলাচল শুরু হলে এই অরাজকতা দেখা যায়।
ভুক্তভোগীরা জানান, ভাড়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। যে যা পারে তা-ই ভাড়া আদায় করছে। বাসের ভাড়া সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত হওয়ার কথা একশ টাকার মতো। সেখানে শুধু সেতু পারাপারেই নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা করে।
কোনো কোনো বাসে ভাড়া আরও বেশি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জনপ্রতি ২০০-৪০০ টাকা করে দিয়ে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করেও সেতু পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ।
মাওয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ভাঙ্গায় যাওয়া আপন পরিবহনের একটি বাসের হেলপার বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে বলেন, সখের দাম ২০০ ট্যাকা। এদিকে, কয়েকগুণ ভাড়া নিয়ে সেতুর মাওয়া প্রান্তে যত্রতত্র তোলা হচ্ছে যাত্রী। এতে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। আজ বেলা দেড়টার দিকে আনন্দ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১১৫৯৪৭) একটি বাস নিয়ম ভেঙে অননুমোদিত স্থানে পার্কিং করে যাত্রী ওঠাচ্ছিল। এই অপরাধে সেতুর মাওয়া প্রান্তে বাসটিকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে পুলিশ।
এ বিষয়ে আনন্দ পরিবহনের বাসের হেলপার নজরুল ইসলাম বলেন, তিন হাজার ট্যাকা ফাইন করছে। এই ট্যাকা তো উঠাইতে হইব। তাই পঞ্চাশ ট্যাকা কইরা বেশি ভাড়া নিতেছি।
পদ্মা দিয়ে আজ সকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে পার হচ্ছে যানবাহন। সেতু চালু উপলক্ষে ভিড় করেছেন শত শত উৎসাহী মানুষ। তারা এসেছেন পদ্মা সেতু ঘুরে দেখতে। সবাই উন্মুখ হয়ে আছে সেতু পাড়ি দিতে। তাদের চাপ সামলাতে ইতোমধ্যে প্রায় ২৫টি বাস নামানো হয়েছে। ভাড়ার মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসের সংখ্যাও বাড়ছে সময়ের সাথে সাথে।
এর আগে দিলারা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, টানা দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাস পেলাম। আমি আগে লঞ্চে ৮০ টাকা দিয়ে নদী পার হতাম। এখন সেতু পার হতে ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে বাসে। ব্রিজ হয়ে লাভ কী হলো?
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাড়ার মোটরসাইকেলে দুইজন করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। অনেক যাত্রীরই নেই হেলমেট। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মোটরসাইকেলে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দুইশ টাকা।
মোটরসাইকেলের মতো মাইক্রোবাসেও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা কেউ করছে না। ১১ আসনের একটি মাইক্রোবাসে নেওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ জন যাত্রী। একেকজনের ভাড়া দুইশ টাকা। ১৩শ টাকা টোল দিয়ে একেক ট্রিপে লাভ থাকছে প্রায় দুই হাজার টাকা।
আজ সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় পদ্মা সেতু এলাকায় উৎসব উৎসব ভাব দেখা গেছে। সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহনের চাপও লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই সেতুতে মোটরসাইকেল ও গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলেছেন। যদিও সেতুতে গাড়ি থামিয়ে হাটাহাটি করা বা ছবি তোলা নিষেধ।
আজকের জন্য বিশেষ বিবেচনায় গাড়ির রুট পারমিট দেখা হচ্ছে না। মাওয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মাওয়ার পরে রুট পারমিট নেই, এমন অনেক বাসে যাত্রীরা সেতু পার হচ্ছেন। জনদুর্ভোগ এড়াতে আজকের জন্য এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে সড়কে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কিনা তা খোঁজখবর নিয়ে দেখছে পুলিশ। সার্বিক অভিযোগও আমলে নিয়ে দেখা হচ্ছে।