করোনা মহামারিতে মানুষের আয় কমলেও বেড়েছে সঞ্চয় প্রবণতা। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে অস্থিরতার কারনে সঞ্চয়পত্র দিকে ঝুঁকছে সবাই। তবে সরকার এই ব্যাপারে নিরুৎসাহি করতে নানা পদক্ষেপ নিলেও আসন্ন সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে সরকারের যত উদ্যোগ
বিক্রির চাপ কমাতে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরো কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। একক ও যৌথ নামে কেনার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমানো যায়নি।
গত অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারিত ছিল
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে ৭৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এটি বিগত পুরো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়েও সাত হাজার ৯৭৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, চলতি অর্থবছর শেষে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
করোনায় গ্রাহকদের চাহিদা বৃদ্ধি
সঞ্চয়পত্র যত বিক্রি হয় সরকারের ঋণও এই খাত থেকে তত বাড়ে। কারণ বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে। সেই সঙ্গে এই খাত থেকে সরকারের ঋণের বোঝাও কমে আসবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। ব্যাংকগুলোতে আমানতের বিপরীতে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে মানুষ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনায় মানুষের সঞ্চয়ের আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংকে সুদের হার কম। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি আছে। তাই নিরাপদ বিবেচনায় মানুষ সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে। আবার সরকারেরও ঘাটতি মেটাতে অর্থের প্রয়োজন আছে। রাজস্ব আহরণ কম। তাই ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রই ভরসা। তাই হয়তো আগামী বাজেটে সরকার এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে।
সঞ্চয়পত্র কেনা উর্ধ্বমুখী
বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৭৬ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা একটি রেকর্ড।