বন্যপ্রাণীর চামড়া বাসায় রাখা কি বৈধ?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২১, ০৯:৪১ পিএম

বন্যপ্রাণীর চামড়া বাসায় রাখা কি বৈধ?

সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে বন্যপ্রাণীর চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরাধিকার সূত্রে, উপহার হিসেবে সহ নানা উপায়ে বন্য প্রাণীর এই অঙ্গ পেয়েছেন বলে জানাচ্ছেন এর মালিকেরা। এর বিপরীতে নাকি নিবন্ধনও রয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, আসলেই কি নিবন্ধন করে এই সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ বাসায়  রাখা যায়?

বন্যপ্রাণী হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

কোন এলাকা যেখানে বন্যপ্রাণী ধরা, মারা, গুলি ছোড়া বা ফাঁদ পাতা নিষিদ্ধ। শুধু বন্যপ্রাণী হত্যাই নয় বরং বন্যাপ্রাণীর নিরাপদ বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন-উদ্ভিদ, মাটি ও পানি ইত্যাদি নষ্ট করাও নিষিদ্ধ। তাই নতুন করে বন্যপ্রাণীর চামড়া বা অন্য অংশ রাখাও নিষিদ্ধ।

নিবন্ধন করার সুযোগ এখনও রয়েছে

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুসারে বন্যপ্রাণী হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে উত্তারাধিকারসূত্রে ও উপহার হিসেবে পাওয়া ট্রফি (বন্যপ্রাণীর অঙ্গ) নিবন্ধন করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বন্য প্রাণীর কোন অঙ্গ রাখার জন্য সেভ ওয়াইল্ড লাইফের মাধ্যমে লাইসেন্স গ্রহণ করা লাগে। তবে লাইসেন্স নেওয়ার জন্য প্রাণীর অঙ্গের উৎস ও সময়কালের যথাযথ ডকুমেন্ট প্রদর্শন করা লাগে। এ ছাড়া বন বিভাগের কর্মকর্তারাও অঙ্গের সময়কাল যাচাই করে নিবন্ধনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে।

বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমানে লাইসেন্স নতুন করে দেওয়া হচ্ছে না। তবে নবায়ন করা হচ্ছে। উত্তরাধিকার বা উপহার পাওয়া ট্রফিগুলো (বন্যপ্রাণীর অঙ্গ) কোন অবস্থা থেকে পাওয়া, এর উৎস ইত্যাদি যাচাই করেই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।

হরিণ ও হাতির অঙ্গ রাখার সুযোগ রয়েছ

বর্তমানে দেশে হরিণ ও হাতি পালন করার সুযোগ রয়েছে। বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে খামার পর্যায়ে অথবা ব্যক্তিপর্যায়ে এই প্রাণী পালনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালে। তবে লালন পালন করলেও হত্যা বা অঙ্গহানি করার বিধান নেই। এছাড়া হরিণের মাংস খাওয়ারও সুযোগ নেই। তবে এই প্রাণী যদি খামার বা ব্যক্তিমালিকানায় থাকা অবস্থায়ই বার্ধক্যজনিত বা অন্য কোন কারনে মৃত্যুবরণ করে, তখন বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে অঙ্গ রাখার অনুমতি রয়েছে। যদিও ব্যক্তিপর্যায়ে এখনও হরিণের মৃত্যু হয়নি। আর লাইসেন্স নিয়ে হাতি পালনও বেশি হচ্ছেনা।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, বর্তমানে হরিণ পালন করছে অনেকে। কিন্তু এগুলোর হত্যা ও অঙ্গহানি নিষিদ্ধ। তবে ভবিষতে যদি কোন কারণে এগুলোর মৃত্যু হয় তখন তারা চামড়া সংরক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবে। বন অধিদপ্তর তা বিবেচনা করবে।

উদ্ধারকৃত অঙ্গ জাদুঘরে যাচ্ছে

বিভিন্ন সময়ে অবৈধ চোরাচালান, ঘরে রাখা, গোপনে দোকানে রাখা ও চিড়িয়াখানা কিংবা সাফারিপার্কে মৃত প্রাণীর অঙ্গগুলো বিভিন্ন জাদুঘর,চিড়িয়াখানাসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে সরক্ষণ করে রাখা হয়। মূলত চিড়িয়াখানা ও পার্কে মৃত প্রাণীর অঙ্গ সেখানেই সরক্ষণ করা হয়। এছাড়া উদ্ধারকৃত অঙ্গ নিকটস্থ বন বিভাগে অথবা জাদুঘরে সরক্ষণ করে হস্তান্তর করা হয়।

আইনে শাস্তি খুবই নগণ্য

বন্যপ্রাণীর চামড়া ও অন্য অঙ্গ থাকার শাস্তি বর্তমান আইনের প্রেক্ষিতে খুবই নগণ্য। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ধারা ৬ অনুযায়ী, লাইসেন্স ও পারমিটপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো কাছে কোনো বন্যপ্রাণী, বন্যপ্রাণীর অংশ পাওয়া যায় অথবা তা থেকে উৎপন্ন দ্রব্য ক্রয়- বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি করেন, আর যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে সর্বোচ্চ এক বছরের সাজা অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তিন বছরের সাজা অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

Link copied!