ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হলেও, এখন আর সেইদিন নেই। দেশের অর্থনীতির পরিসর বেড়েছে। জিডিপির আকার সাড়ে চারশো বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই হিসাবে বাংলাদেশ শীর্ষ ৪০টি বড় অর্থনীতির দেশের একটি।
কিন্তু অর্থনীতির আকার বাড়লেও কমেনি বৈষম্য। সামগিক অর্থনীতি কুক্ষিগত হয়ে আছে দেশের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে। দেশের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষে দখলে রয়েছে ৮৫ শতাংশ সম্পদ।
সোমবার এমনই তথ্য জানিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে যে, কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে। কীভাবে তারা নীতি প্রণয়নকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করছেন।
দেবপ্রিয় বলেন, চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিলো পুরো কাঠামো। এর উৎস ২০১৮ এর নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে যে ভোট হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা নষ্ট করা হয়েছে। জাতিসংঘ এখনো মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।
তবে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কাজ করা যাবে না বলেও মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আর পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগেই, দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকার কি কি উদ্যোগ নেবে, সেগুলোকেও স্পষ্ট করতে হবে।
শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত আট আগস্ট শপথ নেয় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর সংস্কারের জন্য নানা কমিশন ছাড়াও গঠন করা হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোথায় দাঁড়িয়েছে তা নির্ণয় করতে কাজ শুরু করে এই কমিটি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, চামচা পুঁজিবাদ থেকে অর্থনীতিতে ভর করেছিলো চোরতন্ত্র। বড় প্রকল্পে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ানো হতো। গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেতো। ১৫ বছরে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের মধ্যে ব্যাংক খাতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মনে করছে শ্বেতপত্র কমিটি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর অনুরোধ মমতার
দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের চিত্রও তুলে ধরেছে দেবপ্রিয়র নেতৃত্বাধীন কমিটি। তার বলছেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যে পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। কমিটি পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।