দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। অনিবন্ধিত দলগুলো জোট আকারে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পাশাপাশি বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য আহ্বান জানাতে শুরু করেছে। এদিকে নিবন্ধন পেয়ে তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। শুরু থেকেই বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে দল দুইটি।
কোন্দল থাকলেও নির্বাচনের আগে সক্রিয়
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবার নোঙর প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। শুরুতেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত দলটি তাদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত ঘোষণা করতে পারেনি। গত ১০ আগস্ট বিএনএম নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায়। তখন দলের আহ্বায়ক ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান আর সদস্যসচিব ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে এক নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বিএনএমের কাউন্সিল হয়। তাতে আগের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ও জাতীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দলটির মহাসচিব করা হয় মো. শাহজাহানকে। তবে চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদসহ অন্যান্য পদ খালি রাখা হয়।
গত সোমবার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরকে বিএনএমে যোগ দেওয়ার পরপরই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতারাতি কমিটি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে দলটির মহাসচিক মো. শাহজাহান বলেন, আমরা সবাইকে জানিয়ে আমাদের কাউন্সিল ও কমিটি গঠন করি। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ যদি না থাকে তাহলে আমাদের কিছু বলার থাকে না।
মেজর হাফিজ ও দলের অন্যান্য পদ খালি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মেজর হাফিজের বিষয়ে আমাদের কোন আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের দলের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য পদগুলোতে চমক থাকবে। জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এই পদে থাকবে এটা নিশ্চিত করছি।
গত বুধবার তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, রাজনীতি নতুন দলগুলো আসলেই এই ধরনের কথা আসে। তবে বর্তমানে নির্বাচন ছাড়া কোন দলকে ক্ষমতা থেকে হঠানো সম্ভব নয়। যার ফলে দলগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে হঠাৎ করেই প্রতীক ছাড়াই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। এর আগে আওয়ামী লীগের মহাজোটের সাথে থাকলেও এখন নতুন জোট করছে দলটি। তবে প্রতীক নিয়ে ঝামেলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনও প্রতীক নির্ধারণ করিনি। তবে জোটের দলীয় প্রতীক একতারা নিয়ে নির্বাচন করছি না। কেননা আমাদের মতাদর্শের সাথে এই বিষয়টি যায় না।
নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতেই কি এ ব্যবস্থা
‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম দুটি সরকারি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। বিএনপি থেকে বেশ কিছু বড় নেতাকে বের করে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করানোর লক্ষ্য নিয়ে দল দুটি সক্রিয় বলে প্রচার রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দৃশ্যমান হয়নি। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছে শেষ মুহুর্তে এমন সক্রিয় আসলেই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে করা হয়। এদিকে যাদের নিবন্ধন নেই তারাও কিন্তু নিবন্ধিত দলগুলোর সাথে জোট বেঁধে নির্বাচন করছে।
গত রবিবার রাতে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারসহ তিনজনের একটি প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানায় তৃণমূল বিএনপির একাধিক সূত্র।
এদিকে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা নির্বাচনে আসবে না নিয়ে এখন চিন্তা করছেন তাদের বলে রাখি নির্ধারিত সময়ের আগেই অনেককেই দেখবে নির্বাচনে আসছে।
তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার দল বেনামী কিছু দলকে দিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার পাঁয়তারা করছে। সেটা কিংস পার্টি হিসেবে কাজ করবে। এমন কর্মকাণ্ড জনগণ মেনে নিবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হঠাৎ এমন ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয়তা আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে যে এমন কর্মকাণ্ড তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে কি কি বিষয় লাগে সেগুলোর বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে ক্ষমতাসীন দল তার সাথে আগে যেসব দল ক্ষমতায় ছিল তারা একসাথে নির্বাচন করতে হবে। এবং দুই পক্ষই যদি কোনো গুরুতর অভিযোগ না করে তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়।