অর্থনীতির আকবর ‘দ্য গ্রেট’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২, ০৯:৫৯ এএম

অর্থনীতির আকবর ‘দ্য গ্রেট’

অর্থনীতি বিষয় একটু জটিলই বৈকি। সেই অর্থনীতি বিষয় তিনি খুব সহজভাবে লেখালেখির মাধ্যমে সাধারনের জন্য তুলে ধরতেন।

আকবর আলি খান বাংলাদেশের একজন বড় বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সরকারের হবিগঞ্জ মহকুমার প্রশাসক ছিলেন কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুজিবনগর সরকারের হয়ে সক্রিয় কাজ শুরু করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশ পুননির্মানেও তিনি অনেক ভূমিকা রাখেন। অর্থনীতি, প্রশাসন ও বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তার জানাশোনা অনেক। এমনকী বাংলাদেশ ও এর ইতিহাস নিয়েও তা গবেষণামূলক কাজ রয়েছে।

নানা জনমতে বিভক্ত বাংলাদেশের জনমুখী উন্নয়নের জন্য আকবর আলি খান সব সময় সজাগ ছিলেন। তাঁর সুবিধা ছিল ইতিহাস রচনার কারণে তিনি বাংলাদেশের অতীত জানতেন, অর্থনীতির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কাজ করার জন্য অর্থনীতিও বুঝতেন। ফলে অনেকগুলো শাস্ত্রকে এক করে সর্বদা নতুন একটা প্রেক্ষিত ও দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আজীবন। সব সময় তাঁর মধ্যে একটা জনস্বার্থ ও কল্যাণমুখী চেতনা কাজ করেছে।

আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে। তিনি নবীনগরে স্কুলজীবন পার করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ইতিহাস নিয়ে। ১৯৬৪ সালে তিনি ইতিহাসে স্নাতক হন এবং ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি ১৯৭৭ সালে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে আবারও স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। হবিগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগের উপসচিব পদে নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান সামরিক আদালত তাঁর অনুপস্থিতিতে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরে তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

১৯৭৯ সালে দেশে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেও পরে আবার সরকারি চাকরিতে ফিরে যান। তিনি ১৯৯৩ সালে সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থসচিব হন।

হিসেবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক পদে যোগদান করেন। সেখানে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার মুখে পদত্যাগ করেন। দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি শিক্ষকতা করেছেন। অবসরের পর তাঁর আবির্ভাব ঘটে পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্যসহ বিচিত্র বিষয়ে তাঁর গবেষণামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। আকবর আলি খানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৮।

প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ডিসকভারি অব বাংলাদেশ; দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ; পরার্থপরতার অর্থনীতি; আজব ও জবর আজব অর্থনীতি; অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি; চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন; দুর্ভাবনা ও ভাবনা: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে; বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ এবং বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি। আকবর আলি খানের সর্বশেষ আত্মজীবনীগ্রন্থ পুরানো সেই দিনের কথা। এই গ্রন্থে তাঁর বহুমাত্রিক জীবনের উন্মেষ ও বিকাশের কাহিনি উঠে এসেছে।

Link copied!