মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনটির ওপর বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে হাইকোর্টের ওই রায় আপাতত বহাল রইল। এর মধ্য দিয়ে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের আগুনে ঘি পড়ল।
কেনই বা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা? কি-ইবা আছে সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থায়? চলুন জেনে আসা যাক-
‘কোটা’ কি?
‘কোটা’ শব্দটি একটি ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো আনুপাতিক অংশ। বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ হিসেবে দীর্ঘদিন ‘কোটা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কারণে বাংলা শব্দভাণ্ডারের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে এটি।
বর্তমান সময়ে ‘কোটা’ শব্দটি ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলা ভাষায় ‘কোটা’ বলতে আমরা ‘নির্দিষ্ট ভাগ’ বোঝালেও আক্ষরিক অর্থে আমরা সবসময় কোটা বলে আসছি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক এবং সাবেক জজ ইকতেদার আহমেদের লেখা এক নিবন্ধ অনুযায়ী আমাদের সংবিধানে কোথাও স্পষ্টভাবে কোটার বিষয় উল্লেখ না থাকলেও নারী-শিশুদের অনুকূলে বা নাগরিকদের যেকোনও অনগ্রসর অংশের অগ্রগতি বা উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের জন্য প্রচলিত নীতি ও অধিকারের ব্যত্যয়ে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে (১২ এপ্রিল ২০১৮, দৈনিক যুগান্তর)।
‘কোটা’ নিয়ে কি বলে সংবিধান?
বাংলাদেশের সংবিধানেও কোথাও স্পষ্টভাবে কোটার বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও নারী ও শিশুদের অনুকূলে বা নাগরিকদের যেকোনও অনগ্রসর অংশের অগ্রগতি বা উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের জন্য প্রচলিত নীতি ও অধিকারের ব্যত্যয়ে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূল নীতি হলো সুযোগের সমতা। ১৯ নং অনুচ্ছেদের ১, ২ ও ৩ ধারায় পর্যায়ক্রমে বলা হয়েছে-
১. সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে;
২. মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতের জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধা দান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা নেবে;
৩. জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
সংবিধান প্রণয়নকালীন ১৯ নং অনুচ্ছেদটি ১ ও ২ ধারা সমন্বয়ে গঠিত ছিল। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদটিতে ৩ ধারা সন্নিবেশিত হয়।
বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশ হওয়া এক নিবন্ধে আমানুর রহমান রনি লেখেন, কোটা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য- অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। সংবিধানের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে রয়েছে- ‘শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করতে পারবে না রাষ্ট্র’।
সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে- ‘সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বা পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিক সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বা পদের জন্য অযোগ্য হবেন না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য দেখানো যাবে না’।
২৯ নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা আছে- ‘নাগরিকদের যেকোনও অনগ্রসর অংশ যেন সরকারি চাকরিতে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে তাদের কল্যাণে বিশেষ বিধান প্রণীত হবে (১১ এপ্রিল ২০১৮, কোটা কি পুরোপুরি বাতিল করা যায়?, বাংলা ট্রিবিউন)।’
যেসব ক্ষেত্রে ‘কোটা’ মেনে চলা হয়
মেধা তালিকায় ওপরের দিকে অবস্থান করেও অনেক মেধাবী চাকরিপ্রার্থী শুধু কোটার কারণে বঞ্চিত হন। যার ফলে চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে তৈরি হয় হতাশা ও ক্ষোভ।
প্রথম আলোতে এক নিবন্ধে আসিফ নজরুল লেখেন, বর্তমানে দেশে সরকারি চাকরিতে মাত্র শতকরা ৪৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় মেধার ভিত্তিতে, বাকি ৫৫ জনই কোটার ভিত্তিতে। সাধারণত এই ৫৫ ভাগের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা-সন্তান কোটায় ৩০ ভাগ, শুধু জেলা কোটায় ১০ ভাগ, নারী কোটায় ১০ ভাগ এবং উপজাতি কোটায় ৫ ভাগ নিয়োগ করা হয়। কোটার কারণে দেখা যায়, মেধার তালিকায় কয়েক হাজার স্থানে পেছনে থাকা কেউ চাকরি পেয়ে যায়, আবার মেধাতালিকায় কয়েক হাজার ওপরে থেকেও বাকিরা বঞ্চিত হয় (৪ মার্চ ২০১৮, প্রথম আলো)।
কোটা বিরোধিতার যুক্তি দেখিয়ে তিনি লেখেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে আরেকটি আপত্তি করা হয়- এতে জালিয়াতি বা দুর্নীতির সুযোগের কারণে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও টাকা বা সম্পর্কের জোরে ভুয়া সার্টিফিকেট জোগাড় করে সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেওয়া সম্ভব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যে দেশে রয়েছে, তার একটি বড় প্রমাণ বিভিন্ন আমলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি। ১৯৮৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৬৯ হাজার ৮৩৩। পরে বিভিন্ন সময়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রথম আলোতে প্রকাশ হওয়া আসিফ নজরুলের ওই লেখনীতে উঠে আসে কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতার যুক্তি। এতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে জালিয়াতি বা দুর্নীতির সুক্ষ্ম জাল তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এছাড়া ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এই সংবিধান যেখানে উত্থাপিত হয়েছিল, সেই গণপরিষদেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটা রাখার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল না। শুধু গণপরিষদে সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদের অধীন নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া প্রসঙ্গে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় (বাংলাদেশ গণপরিষদের বিতর্ক, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৭২, পৃষ্ঠা ৪৭০-৪৭১)।
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী ছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে ৫৬ শতাংশ বিভাজন রেখা বা কোটা মেনে চলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৩০ শতাংশ;
নারী: ১০ শতাংশ;
জেলা: ১০ শতাংশ;
আদিবাসী: ৫ শতাংশ;
প্রতিবন্ধী: ১ শতাংশ।
এখানে বিবেচ্য বিষয় এই যে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানসন্ততি ও নাতিনাতনিদের ৩০ শতাংশ কোটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলন বা বিক্ষোভকারীরা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কোটা (৫৬ শতাংশ) রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। এটা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য কেন ৩০ শতাংশ কোটা রাখা হবে? প্রকৃত অর্থে এই কোটাকেই কমিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন বিক্ষুব্ধ এসব চাকরিপ্রার্থী।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত নিবন্ধে আসিফ নজরুল বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রণীত ইন্টেরিম রিক্রুটমেন্ট পলিসিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটার কথা বলা হয়। এই ইন্টেরিম স্বল্প সময়ের জন্য প্রযোজ্য রাখার কথা বলা হয়েছিল (আসিফ নজরুল)।
১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের একজন বাদে বাকি সব সদস্য সরকারি নিয়োগে কোটাব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। কমিশনের ওই সদস্য অবশ্য ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন (৪ মার্চ ২০১৮)। তবে এই কোটা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারণ করে ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে এর আওতাভুক্ত হন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। একপর্যায়ে তাদের না পাওয়া গেলে পদ শূন্য রাখার নীতি গৃহীত হয়। পরবর্তীতে কোটাধারীদের স্বার্থে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার সুযোগ সংকোচন করা হয়।
‘কোটা’ মানবো কেন?
ইউরোপ-আমেরিকার মতো বিভিন্ন দেশে যেকোনও অনগ্রসর, অবহেলিত বা বঞ্চিত অংশ বা শ্রেণির উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ‘কোটা’ প্রথা মেনে চলা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা। যখন এসব শ্রেণির উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের অবকাশ সম্পন্ন হয়ে যায় তখন এই হার কমিয়ে আনা হয় বা ক্ষেত্রবিশেষে তা রহিত হয়। বাংলাদেশে কোটা প্রথা প্রবর্তনকালীন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসন্ততি ও নাতি-নাতনি এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ দেওয়ার পেছনে যে যৌক্তিক কারণ ছিল, সেটা হলো- মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলশ্রুতিতে তাদের অনেকের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের কারণে পরিবারগুলো যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল সেটা পূরণে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। এই পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্যের কারণে কোটা প্রথার সুবাদে নির্ধারিত যোগ্যতাধারী মুক্তিযোদ্ধারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে নিযুক্ত হয়ে চাকরির সুযোগ লাভ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে চাকরি থেকে অবসরের বয়স অন্যদের চেয়ে ১ বছর বেশি করায় তারা বর্তমানে ৬০ বছরে উন্নীতের পর অবসরে যান।
নারী ও জেলা নামে বর্তমানে ১০ ভাগ করে যে ২০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করা হয়, তা দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য লাভের কারণে উভয় শ্রেণীর অনগ্রসর বা অবহেলিত বা বঞ্চিত অবস্থানের উত্তরণে তাদের প্রধান শ্রেণীর সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে বা আসার উপক্রম ঘটিয়েছে।
আদিবাসী নামে প্রারম্ভিক অবস্থায় যে কোটা প্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল, তা বর্তমানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করে। আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ‘কোটা’র পৃষ্ঠপোষকতা বা আনুকূল্য ভোগ করে আসতে থাকলেও তাদের সমপর্যায়ের অন্য তিনটি গোষ্ঠী সেভাবে আনুকূল্য লাভ করেনি। আর তাই অন্য তিনটি গোষ্ঠী যেন আদিবাসীদের সঙ্গে সমবিবেচনায় নিজেদের অনগ্রসরতা বা অবহেলা বা বঞ্চনার অবসান ঘটাতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সচেষ্ট হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কোটা প্রথা প্রবর্তনকালীন প্রতিবন্ধী নামে কোনও কোটা ছিল না। প্রতিবন্ধীদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য বা পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়াকে অনেকে প্রশংসার চোখে দেখে থাকেন। আবার কোটার সমর্থকরা ইউরোপ ও আমেরিকায় কোটা থাকার যে যুক্তি দেখান, এর সমালোচকরা তার বিপরীতে গিয়ে মনে করেন, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের কোনও দেশে ঢালাওভাবে কোটা ব্যবস্থার প্রয়োগ হয় না। প্রথম আলোর নিবন্ধে আসিফ নজরুল এ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে লিখেছেন, আমার জানামতে, আমাদের মতো ঢালাও কোটাব্যবস্থা অন্য কোথাও নেই। ভারতের উদাহরণ দিই। ভারতে কোটাপদ্ধতি পরিচিত রিজারভেশন বা সংরক্ষণ নামে। সেখানে সংবিধান অনুসারে শুধু তালিকাভুক্ত নিম্নবর্গ ও উপজাতি শ্রেণিদের জন্য সরকারি চাকরি, জনপ্রতিনিধিত্ব এবং উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। পরে মানডাল কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে ১৯৯২ সাল থেকে সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক দিয়ে অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত পেশার মানুষের (যেমন কৃষিশ্রমিক, নাপিত, ধোপা প্রভৃতি) সন্তানদের জন্যও কোটার ব্যবস্থা করা হয় (প্রথম আলো)। তিনি মনে করেন, ন্যায়পরায়ণতার স্বার্থে কোটার পরিবর্তন আনা জরুরি।
অপরদিকে সরকার সেটা করতে নারাজ। ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোটা ব্যবস্থাই বাতিল করে দেওয়া হলো। মৌখিক সেই ঘোষণায় আশ্বস্ত হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থী তরুণরা।
চলতি বছর নতুন করে হাইকোর্টে কোটা পুনর্বহাল করায় এবং সরকার আগের অবস্থানে ফিরে আসায় চলতি সপ্তাহ থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতেই হবে। কিন্তু কীভাবে, কার জন্য কতটুকু রাখা হবে- সেটা পুরোপুরি সরকারের বিষয় (১৮ জুলাই ২০১৮, বিবিসি)।”
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “সংবিধানে যা বলা হয়েছে যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু সেটা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণই হতে হবে- সেটা একদম নয়।”