রোজা ও ঈদুল ফিতরের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে ২৬ দিন বন্ধের পর আগামীকাল ২১ এপ্রিল স্কুল খোলার কথা ছিল। তীব্র তাপদাহের কারণে সারা দেশে জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারও সাতদিন বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে আসন্ন পরীক্ষার জন্য পাঠ্যসূচি শেষ না হওয়ায় এমন দীর্ঘকালীন ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক।
গত তিনদিনে ১৩ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণ গতকাল শুক্রবার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এই তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে জানিয়ে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
সাতদিন স্কুল বন্ধের দাবি অভিভাবকদের, চিন্তিত শিক্ষকরা
চলমান তাপদাহে দেশের শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এক বিজ্ঞপ্তিতে সাতদিনের জন্য শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানায় অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।
বানেশ্বরদী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনানের মা নার্গিস বেগম পেশায় গৃহিণী। গরমে শিশুদের নিয়ে স্কুলে যাওয়ার অসুবিধার বিষয়টি তুলে ধরে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন, ‘গরমে স্কুল বন্ধ রাখাটা যৌক্তিক। শিক্ষকরা সিলেবাস (পাঠ্যসূচি) শেষ করার বিষয়টা ভাবছেন। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু গরমে আমাদের ছেলেমেয়েরা এতটাই কাহিল হয়ে উঠেছে যে, তাদেরকে স্কুলে পাঠাতে আমরা ভয় পাচ্ছি।’
একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিফের মা লাকি আক্তার মর্নিং শিফটে ক্লাস করানোর দাবি তুলেছেন। গরমে তার ছেলের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গরমে আমাদের ছেলেমেয়েদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। আমার ছেলে তো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
অভিভাবকদের দাবি অনুযায়ী শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশের সব সরকারি প্রাথমিক স্কুল সাতদিন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে দীর্ঘ দিন ছুটি শেষ না হতেই আবারও ছুটির ঘোষণায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বানেশ্বরদী সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিনুয়ারা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘আগামী মাসেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। দীর্ঘদিন ছুটি কাটানোর ফলে আমরা নিয়মিত পাঠ্যসূচি কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি। এত অল্প সময়ে পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করা নিয়ে এমনিতেই আমরা চিন্তিত। এর মধ্যে স্কুল না খুলতেই আবারও দীর্ঘদিনের ছুটি আমাদের চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ দিনশেষে সিলেবাস শেষ না করেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসালে সেই দায়ভারও আমাদের ওপর পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বছর পুরো বৈশাখ জুরেই গরম পড়ার কথা। সামনে যদি রোদের তাপ আরও বেশি থাকে তবে কি সারা বছরই এমন ছুটি থাকবে? আর এমন সুবিধা অসুবিধা চিন্তা করতে গিয়ে বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধের হার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দিন শেষে এর ভুক্তভোগী হবে শিক্ষার্থীরা।’
পৈলানপুট্টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বৈশাখ শুরু না হতেই এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ। দীর্ঘ এক মাস বন্ধের পর আবার এক সপ্তাহের বন্ধে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে। কারণ সামনে পরীক্ষার প্রস্তুতি এখনও অনেকটা বাকি। ফলে আমরা পর্যাপ্ত সময় পাবো না তাদের সিলেবাস শেষ করার। আর পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে অভিভাবকরা খুব সহজেই নানা অভিযোগ তুলবেন।’