সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীরা হল ছাড়তে নারাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কোনওভাবেই তারা হল ছাড়বেন না। এরই মধ্যে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই হলে থাকার বিষয়ে অনড় অবস্থান প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন: কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধান চেয়ে ঢাবি বন্ধ ঘোষণা
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই নির্দেশ মানবেন না বলে জানিয়েছেন কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র একাধিক সমন্বয়কও বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছেন। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি। তাদের যৌক্তিক আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্রে আমরা কেউ পা দেবো না। হল না ছাড়ার বিষয়ে সব শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।”
হল ছাড়ার ঘটনায় উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের দমনে পর পর কয়েকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক সম্মেলন কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় পুলিশ। এ ঘটনায় কয়েকজন সাংবাদিক আহতের খবর এসেছে।
এদিকে হল ফাঁকা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কোটা বাতিলের দাবিতে দুপুর একটার দিকে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে দেড়শতাধিক পুলিশ সাঁজোয়া যান এপিসি নিয়ে প্রবেশ করে।
হল ছাড়ার নির্দেশ নাকচ করে দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরাও। বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশ নাকচ করে ‘হল আমরা ছাড়বো না’ শ্লোগান দিতে থাকেন এবং মিছিল সহকারে ক্যাম্পাসে বের হন। দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি। তাদের যৌক্তিক আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্রে আমরা কেউ পা দেবো না। হল না ছাড়ার বিষয়ে সব শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
- আসিফ মাহমুদ
সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
এদিকে আজ থেকেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া চারটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের আজ বিকেল তিনটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতেই আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সেটা বানচাল করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হামোদাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও একই দিন বিকেল তিনটার মধ্যে প্রশাসনের হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের ভাষ্য, দেশব্যাপী অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। আশপাশের জেলাগুলোর শিক্ষার্থীরা কোনওভাবে বাড়িতে যেতে পারলেও দূরের শিক্ষার্থীরা এই মুহূর্তে বাসায় ফেরার মতো অবস্থায় নেই। তাই তারা হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।