বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও আমার প্রিয় শিক্ষক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৫, ২০২১, ০৭:৫৮ পিএম

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও আমার প্রিয় শিক্ষক

শিক্ষক এক মহান তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ। তাঁরা সমাজ বিনির্মাণের কারিগর, আলোচিত ব্যক্তি। তাদের মহান কাজের মাধ্যমেই সমাজের পরবর্তী প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হলো শিক্ষক দিবস। এবছরের শিক্ষা  দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: ‘শিক্ষকই শিক্ষা-পুনরদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে।’

শিক্ষক দিবসে আজ মনে পড়ে অনেক শ্রদ্ধাসিক্ত পূজনীয় শিক্ষকের স্মৃতিকথা, যাদের দেখেছি জীবনের প্রথম অংশে প্রাথমিক স্কুলে, কাউকে মাধ্যমিক স্কুলে আর কাউকে শিক্ষাজীবনের শেষাংশে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।

পূজনীয় শিক্ষকদের চরণ ধুয়ে দিয়ে প্রশান্তি লাভের সুযোগ হয়তো পাইনি দিল্লির বাদশাহি দরবারের রাজপুত্রদের মতো; তবে তাদের স্নেহসিক্ত আচরণ তাদের চরণ ছুঁয়ে সেবা করার আকুতি তৈরি করত মুগ্ধ হৃদয়ে সেই শৈশবে।

একদিন হাতে কলমে যে শিক্ষক বর্ণমালা শিখিয়েছেন, আজ একুশ বছর পর, পরম পূজনীয় সেই শিক্ষক হাসপাতালের সিড়ি পাড়ি দিয়েছেন তারই সেই ছাত্রের হাত ধরে। ছাত্র হিসেবে আমি আনন্দিত, আমি গর্বিত!

এই অনুভূতির ভাষা আমার জানা নেই। যে আলতো হাতের ছোঁয়ায় সন্তানের স্নেহ পেয়েছি,সেই হাত ধরার সাহস পাইনি কখনও। আজীবন পদধূলি নিয়েছি তাঁর চরণ স্পর্শ করে। প্রিয় শিক্ষকের চিকিৎসায় সামান্য সহযোগিতা করতে পেরে এক ছাত্রের এমন অভিব্যক্তি তৎসামান্য বটে।

গল্পটি বলছিলেন প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে তারই এক ছাত্র।

মফস্বল শহরের এক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক তিনি। তাঁর বয়স সত্তর কি পঁচাত্তর বছর। সারাজীবন ছাত্রদের ভাল-মন্দের পাঠ দিয়েছেন। বাড়ি বাড়ি ছুটে গেছেন নিজ দায়িত্বে। ছাত্রের সাফল্যকেই নিজের সাফল্য হিসেবে দেখেছেন। জীবনে প্রথমবার চিকিৎসা কাজে ঢাকায় আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এই জগৎ সংসারে ছাত্ররাই তার আত্মার আত্মীয়।  প্রকৃতির মতো নিঃস্বার্থ এই শিক্ষক ঢাকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তার ছাত্রকে জানিয়ে এতটুকু বিরক্ত না করতে মন স্থির করেন। কিন্তু আপত্তি রেখেই শিক্ষকের স্ত্রী এই ছাত্রকে ফোন করে জানান, 'বাবা, তোমার স্যার ঢাকায় যাচ্ছে চিকিৎসার কাজে। অসুবিধা না থাকলে একটু সময় করে মানুষটার সাথে দেখা কইরো। অনেকদিন ধরে অসুস্থ, জোরাজোরি করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি।'

তিন ঘন্টা বাস জার্নি করে সকাল দশটায় স্যার ঢাকায় আসলেন। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগেই তিনি হাসপাতালে উপস্থিত। ছেলেবেলার সেই মানুষটার সময় জ্ঞান একটুও বদলায়নি। নির্ধারিত সময়ে হাসপাতাল গেটের সামনে পৌছে দেখি সেই চিরচেনা মানুষটি দাঁড়িয়ে আছেন। পায়ে ছুঁয়ে সালাম করলাম। মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন।

ডাক্তার দেখিয়ে, পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে বিকেল হয়ে গেল। এই পাঁচ ছয় ঘন্টায় এক মুহূর্তের জন্যে বিরক্তি আসেনি। মনে হয়নি ঠেকায় পরে ছয়ঘন্টা সময় নষ্ট হয়ে গেল।

স্যারকে বাসে তুলে দিয়ে যখন ফিরছিলাম তখন মনে পড়ে গেলে স্যারের হাত ধরে অ,আ,ক,খ শিখানোর সেই মুহূর্ত। মনে পড়ে গেল মানুষটার পরার্থপরতার কথা। আজ শিক্ষক দিবসে সেই সকল শিক্ষকদের স্মরণ করি যারা পরম মমতায় ছাত্রদের জীবন আলোকিত করেছেন। জন্মদাতা পিতা-মাতার পরেই যারা সর্বশ্রেষ্ঠ অভিভাবকের আসন নিয়ে আছেন।

এই ছাত্রের মতোই হাজারো ছাত্রের হৃদয়ে পরম শ্রদ্ধার আসন জুড়ে আছেন অসংখ্য শিক্ষক। পেশাদারিত্বের দেয়াল অতিক্রম করে যারা পিতৃতুল্য মর্যাদায় আসীন। কখন কঠোর শাসনে কখনও পরম মমতায় সাজিয়েছেন ছাত্রের শৈশব-কৈশোর। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি ছাত্রের শিক্ষা জীবনের এই দীর্ঘ সময়ে কতো শিক্ষকের কতো নিঃস্বার্থ প্রয়াস তার কতোটুকুইবা প্রকাশ করা সম্ভব।

শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। ভাল থাকুক প্রিয় শিক্ষক,প্রিয় অভিভাবক।

Link copied!