গরমের তীব্রতায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে দেশ। শুধু দেশ নয়, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পড়ছে এই গরম। ঘোষণা করা হয়েছে ‘হিট অ্যালার্ট’। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে নাকি বন্ধ থাকবে- এমন বিতর্কের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও একটি বিতর্ক চোখ এড়ায়নি। আর তা হলো- ‘তাপদাহ’ নাকি ‘দাবদাহ’। কোনো গণমাধ্যম লিখছে ‘তাপদাহ’, আবার কোনোটা লিখছে ‘দাবদাহ’।
বিষয়টি নিয়ে অভিমত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রাবন্ধিক কুদরত-ই-হুদা।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ভাষ্য, ‘তাপপ্রবাহ’ বলতে আবহাওয়ার সহনীয় গতি বোঝায়। আর তাপদাহ হচ্ছে তীব্র তাপ ও দাহ মিলে গঠিত কাছাকাছি শব্দ। এটা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত, কিন্তু অভিধানে নেই। বর্তমান যে অবস্থা অনুভূত হচ্ছে সেটা ‘দাবদাহ’ এবং সেটা অভিধানিক। তাই আমি ‘দাবদাহ’ শব্দটি ব্যবহারের পক্ষে।
একইভাবে ‘দাবদাহ’ শব্দটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি যোগ করেন, ‘তাপদাহ’ শব্দটি ব্যবহার সঠিক নয়, আবার মারাত্মক কোনো ভুলও নয়। তবে ‘দাবদাহ’ শব্দটি ব্যবহারের পরামর্শ দেবো আমি।
কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিজস্ব পরিভাষা অনুযায়ী শব্দটি ‘তাপপ্রবাহ’। এটি বলতে তাপের প্রবাহ বোঝায়। অর্থাৎ দেশজুড়ে তাপ প্রবাহিত হচ্ছে, এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। যেমন: শীতের সময় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আরেকটি শব্দও ব্যবহৃত হচ্ছে- ‘তাপদাহ’। এটি অভিধানে না থাকলেও ভুল নয়। তাপের কারণে যে দহন হচ্ছে বা শরীরে পোড়ার অনুভূতি হচ্ছে, সেটি বোঝানোর জন্য এটি সঠিক শব্দ। মানুষ সবসময়ই প্রয়োজনে নতুন শব্দ তৈরি করে, এটিও তেমনই একটি। অভিধানে আছে আরেকটি শব্দ আছে- ‘দাবদাহ’। বনের আগুন থেকে সৃষ্ট দাবানল থেকে দাবদাহ। আরও স্পষ্ট করে বললে ‘তাপদাহ’ জনগণের মুখের ভাষা, আর আভিধানিক শব্দ ‘দাবদাহ’। আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো শব্দই সঠিক।
এক্ষেত্রে ‘তাপপ্রবাহ’ শব্দটি ব্যবহার করা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তার ভাষ্য, প্রবাহ শব্দের অর্থ প্রবহমান বা বয়ে চলা। আর ‘দাহ’ শব্দের অর্থ উত্তাপ। কাজেই দুটি শব্দের অর্থে সামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। কিন্তু ‘তাপের তীব্রতা’ বোঝাতে এর সঙ্গে ‘দাহ’ শব্দ যুক্ত হয়েছে। ‘তাপ’ ও ‘দাহ’ শব্দদয় প্রায় কাছাকাছি অর্থ বহন করে। কাজেই ‘তীব্র তাপ বয়ে চলা’ অর্থে তাপপ্রবাহ শব্দটির ব্যবহার প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।
‘তাপপ্রবাহ’ শব্দটি ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়ে প্রাবন্ধিক কুদরত ই হুদা বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রাবন্ধিক কুদরত ই হুদা বলেন, ‘তাপদাহ’ শব্দটি উচ্চারণ করলে ‘শবদাহ’ শব্দটি মনে আসে। শবদাহ শব্দে ‘দাহ’ অর্থ পোড়ানো; মৃতদেহ পোড়ানো। এদিক থেকে ‘তাপদাহ’ শব্দটি খুব বেশি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে হ্যাঁ, তাপদাহ শব্দের এমন একটা অর্থ করা যেতে পারে- ‘তাপে দাহ হয়ে যাওয়ার অবস্থা’।
‘তাপদাহ’ কিংবা ‘দাবদাহ’ বিতর্কে না গিয়ে বরং ‘তাপপ্রবাহ’ শব্দটি অধিক অর্থ উৎপাদনে সক্ষম বলেই অভিমত দিয়েছেন এসব ভাষাবিদ। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য দাঁড়ায় তাপের প্রবাহ। এছাড়া এই শব্দের কাছাকাছি একটি শব্দ আমাদের জানাই আছে- ‘শৈত্যপ্রবাহ’। প্রশ্ন উঠেছে, ‘তাপপ্রবাহ’ শব্দ থাকতে ‘তাপদাহ’ কেন ব্যবহৃত হবে?