জাবির বটতলায় আড্ডার সাথে ভর্তা-ভাতে উদরপূর্তি

তাহমিদ সাকিব

ডিসেম্বর ৪, ২০২৩, ০৯:৪৩ পিএম

জাবির বটতলায় আড্ডার সাথে ভর্তা-ভাতে উদরপূর্তি

সংগৃহীত ছবি

থরে থরে বাহারি রকমের ভর্তা সাজানো। সাথে ধোঁয়া উঠা গরম ভাত। ভর্তা ভাতের সাথে বিভিন্ন রকমের দেশীয় খাবার। এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার চিত্র। উদরপূর্তির জন্য জাহাঙ্গীরনগরের এই জায়গাটা সবকিছু থেকে আলাদা-- এমনটা মনে করেন শিক্ষার্থীরাও।

মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে  বটতলায় বসে বাহারি সুস্বাদু খাবার খেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেরও অনেকেই ঘুরতে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাবির এই বটতলার ভর্তা-ভাতসহ হরেক রকমের খাবার সবার কাছেই তাই বহুলভাবে সমাদৃত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামজিদ পরীক্ষা শেষ করে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘুরাঘুরির ফাঁকে বটতলায় একসাথে ভর্তা-ভাত খান তারা। তিনি তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন, হালকা শীত শীত, একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ, পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে একসাথে আনন্দ করে বটতলায় এই সুস্বাদু ভর্তা-ভাত খাচ্ছি, খুবই আনন্দ লাগছে। এখানকার খাবারের দামও মোটামুটি, অনেকগুলো ভর্তা টেস্ট করা যায়, একেক ভর্তার স্বাদ একেক রকম। ভর্তার সাথে অন্য যেই খাবারগুলো খেয়েছি সেগুলোও অসাধারণ।

দিনের পুরোটা সময়  এমনকি শেষ রাত পর্যন্ত এখানে শিক্ষার্থীদের গল্প-আড্ডা-গানে মুখরিত হয়ে থাকে এই বটতলা। তাই জাবি শিক্ষার্থীদের কাছে বটতলা এক প্রিয় জায়গা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থী রুকাইয়াও তেমনটাই মনে করেন। 

তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ সময় কাটে বটতলায়। আমরা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই এখানে বসে।আড্ডা দিতে দিতে যখন খাবারের সময় হয়ে যায় তখন এখানেই সবাই একসাথে খেয়ে ফেলি। বই খাতা নিয়ে মাঝে মাঝে গ্রুপ স্টাডি করি।এর ফাঁকে ফাঁকে চা কফি খাই। আর বটতলার ভর্তা ভাতের কথা না বলে তো উপায়ই নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা গর্বিত কারণ আমাদের বটতলায় বসে ভাত ভর্তা খাওয়ার মতো একটি জায়গা আছে। ক্যাম্পাসের বাইরের অনেকেই এখানে খেতে আসে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা প্রায়ই আসে এখানে।

বটতলার দোকানগুলোতে যেসব ভর্তা মিলে

জাবির প্রাণকেন্দ্র এই বটতলা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত  মুখরিত থাকে বটতলা প্রাঙ্গন।  চলে  আড্ডা। এই আড্ডাই বটতলার প্রাণ। বটতলার দোকানগুলোর নামগুলোতেও রয়েছে বিশেষত্ব । নামগুলোও যেন আলাদা করে কিছু ব্যাক্ত করতে চায়।  তাজমহল, নূরজাহান, বাংলার স্বাদ, সুজন, বাঙালি হোটেলসহ আরও অসংখ্য। এই নামগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অনেক দিনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সুখময় স্মৃতি।

এসব দোকানগুলোতে দুপুর না হতেই বাহারি রকমের ভর্তার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। প্রতিটি ভর্তা ৫ টাকা করে। এমন ৩০-৩৩ প্রকারের ভর্তা পাওয়া যায় দোকানগুলোতে।

শুঁটকি মাছের ভর্তা, চিংড়ি মাছের ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, রুই মাছের ভর্তা, চিকেন ভর্তা,বাদাম ভর্তা, সরিষা ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ডাল ভর্তা, শিম ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ভেণ্ডি ভর্তা, টমেটো ভর্তা, আলু ভর্তা। এছাড়াও রয়েছে  লাউশাক ভর্তা, কলা ভর্তা, কচু ভর্তা, রসুন ভর্তা, ডিম ভর্তা, মরিচ ভর্তা, ইলিশ মাছের ভর্তা, আরও অনেক ধরনের ভর্তা মিলে এসব দোকানে। বেলা বাড়তেই দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে । ভর্তার সাথে  আছে বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ডিম তরকারি, মুরগির মাংস, খাসির মাংস, ইলিশ মাছ, চাপিলা মাছ, রুই মাছসহ আরও অনেক খাবার।

“এটিই আমার প্রথমবারের মতো জাহাঙ্গীরনগর আসা। এর আগে অনেকবার আসতে চেয়েছি, কিন্তু আসা হয়নি। হুট করে বন্ধুরা বলল চল জাহাঙ্গীরনগর থেকে ঘুরে আসি, হালকা শীতে বটতলায় ভর্তা ভাত খাবো, রাতে আড্ডা দিবো। তাই চলে আসলাম বন্ধুদের সাথে। এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভেতরে সবকিছু, ঢাকার যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে থেকে একটু মুক্তি মেলে। এখানকার ভর্তা ভাতের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।” বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

বটতলার নামকরণ

বটতলার নামকরণ কবে বা কীভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না।তবে লোকমুখে শোনা যায়, আগে এখানে বড় বট গাছ ছিল। হতে পারে সেখান থেকেই এই বটতলার নামকরণ। জাহাঙ্গীরনগরের এই জায়গাটিতে প্রথমে চা-নাস্তার জন্য দুই-তিনটি দোকান ছিলো।তবে বর্তমানে অসংখ্য খাবার হোটেল আছে এখানে। এই বটতলা তাই খাবারের জন্য জাবি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার উপরেই থাকে।

বটতলার একটি দোকান ‍‍`বাংলার স্বাদ‍‍` এর মালিক ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, "ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তো নিয়মিত খায়। তারা একসাথে আড্ডা দেয়, গল্প করে, আমাদেরও ভালো লাগে। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেকে খেতে আসে। আমাদের এখানকার খাবার তাদের ভালো লাগে এটা তো আমাদের জন্যও ভালো লাগার।"

Link copied!