বেড়েছে নারীর খতনা, কম বয়সীরা ঝুঁকছে বেশি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৮, ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম

বেড়েছে নারীর খতনা, কম বয়সীরা ঝুঁকছে বেশি

ছবি: বিবিসি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীদের খতনা করানোর প্রথা চালু আছে। ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) নামে পরিচিত এই প্রথা। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে,  গত আট বছরে মেয়ে শিশু ও নারীদের খতনা করানোর সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, বিশ্বে প্রায় ২৩ কোটি নারী খতনা করানোর পর বেঁচে আছেন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০ কোটি। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানান, কম বয়সী নারীদের খতনা করানোর প্রবণতা বেশি। 

নারী খৎনা আসলে কী?

নারীদের খৎনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা। অনেক সময় ভগাঙ্কুর এর পাশের চামড়া কেটে ফেলা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে, ‍‍`‍‍` চিকিৎসার প্রয়োজন ব্যতীত এমন যেকোনো প্রক্রিয়া, যা নারীদের যৌনাঙ্গের ক্ষতি করে থাকে।‍‍`‍‍`

এ ধরণের কাজে নারীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করে থাকে, যার স্বাস্থ্যগত কোন উপকারিতা নেই।

নারীদের জন্য উদ্বেগ এবং তাদের পরবর্তী সম্পর্কের ওপর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে এই বিষয়টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা জোর করে এটি করা হয়ে থাকে।

ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বজুড়ে নারীদের খতনা করানো না হলেও যেসব দেশে খতনা করানো হয় সেসব দেশে মেয়ে শিশুর জন্মহার বেড়েছে। জাতিসংঘ চাইছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে নারী খৎনার বিষয়টি নির্মূল করতে।

জাতিসংঘ বলছে, নারীদের যৌনাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ২০১২ সালে এটি নিষিদ্ধ করে একটি রেজ্যুলেশনও পাস হয়।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ৬০ শতাংশ নারীদের খতনাই হয় আফ্রিকায়। সেখানে ১৪ কোটি ৪০ লাখ নারীর খতনা করানো হয়েছে। এরপর বেশি নারীদের খতনা করানো এশিয়াতে। এই মহাদেশে ৮ কোটি নারীর খতনা করানো হয়েছে।  এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যেও ৬০ লাখ নারীর খতনা করান রয়েছে। 

প্রতিবেদন আরও বলা হয়,  আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়া, গিনি,জিবুতি,মিসর, সুদান ও মালিতে সবচেয়ে বেশি নারীদের খতনা করানো হয়। এসব দেশে যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো সমস্যার কারণে নারীদের জন্য কোনো কর্মসূচি সফল করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।  

এরমধ্যে কিছু আফ্রিকান দেশে গত কয়েক দশকে নারীদের খতনা করানোর চর্চা থেকে বেরিয়েছে। তবে মোট সংখ্যা বেড়েছে।

নারী খৎনা করা হয়?

নারীদের খৎনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।

অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খৎনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়।

কোথায় এ ধরণের রীতি চালু আছে?

বর্তমানে আফ্রিকার অনেক এলাকায়, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে এই রীতি চালু আছে। তবে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু অভিবাসী সমাজে, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার কোন কোন গোষ্ঠীর ভিতর এই প্রবণতা রয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে ব্যাপকভাবে এই রীতি চালু রয়েছে, যদিও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই এটি নিষিদ্ধ।

এমনটি যুক্তরাজ্যে নারীদের খৎনা বেআইনি, তবে মেয়ে শিশুদের ওপর এরকম খৎনা করার প্রবণতা বাড়ছে। এসব শিশুরা স্কুলে না পড়ায় বা যথেষ্ট বড় না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সহজে সনাক্ত করতে পারেন না।

Link copied!